শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:২৯ পূর্বাহ্ন

গাজীপুরের কাঁঠাল : ‘কাঁঠালের রাজধানী’ থেকে জিআই পণ্য

আলোকিত স্বপ্নের বিডি
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫

গাজীপুর জেলা বহুদিন ধরেই পরিচিত “কাঁঠালের রাজধানী” নামে। এর ঘ্রাণ, স্বাদ ও গুণমান দেশের মধ্যে অনন্য। রাস্তার দুপাশে, বাজারে, বাড়ির আঙিনায়—যেদিকে চোখ যায়, শুধুই কাঁঠাল! বিশেষ করে শ্রীপুর, কাপাসিয়া ও কালীগঞ্জ উপজেলায় বিপুল পরিমাণ কাঁঠাল উৎপাদন হয়। শ্রীপুর তো এখন যেন কাঁঠালের রাজ্য!

এ গৌরবময় পরিচিতি আরও বড় স্বীকৃতি পেয়েছে সম্প্রতি। দেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল এবার পেয়েছে ভৌগোলিক নির্দেশক (GI) পণ্যের মর্যাদা—আর সেই GI তালিকায় যুক্ত হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুরের বিখ্যাত কাঁঠাল। দেশের ৪৭তম GI পণ্য হিসেবে এটি নিবন্ধিত হয়েছে। গত বছরের ৬ মার্চ “ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন-২০১৩” অনুযায়ী এটি জার্নাল-৪৬-এ অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ৮ মার্চ প্রকাশিত হয় পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে।

জেলা কৃষি অফিসের তথ্য বলছে, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে গাজীপুরে ৯,১০৩ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শ্রীপুরে সবচেয়ে বেশি—৩,৫৫২ হেক্টর। পুরো জেলায় উৎপাদন হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন কাঁঠাল। উঁচু জমি, বন্যামুক্ত পরিবেশ এবং অনুকূল আবহাওয়ায় এখানকার কাঁঠাল হয় বড়, মিষ্টি আর সুগন্ধে ভরপুর।

গাজীপুরে তিনটি জাতের কাঁঠাল বেশি উৎপাদিত হয়—খাজা, গালা ও দুরসা। এগুলো ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি হয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায়। শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজার এলাকায় বসে দেশের সবচেয়ে বড় কাঁঠাল হাট। পাইকারি ক্রেতারা কম দামে সুস্বাদু কাঁঠাল কিনতে আসেন। মৌসুমে প্রতিদিন হাজার হাজার কাঁঠাল বিক্রি হয়—বিক্রি চলে রাতদিন।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক জুড়ে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ট্রাকের লাইন ধরে কাঁঠাল ওঠানো-নামানোর দৃশ্য হয়ে ওঠে পরিচিত। শুধু দেশে নয়, গাজীপুরের কাঁঠাল রপ্তানি হয় মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও।

তবে সমস্যাও আছে। স্থানীয়রা বলছেন, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং হিমাগারের অভাবের কারণে কাঁঠালের ভরা মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত দাম পান না চাষিরা। উপযুক্ত নীতিমালা, অবকাঠামো উন্নয়ন, হিমাগার স্থাপন ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি নিলে গাজীপুরের কাঁঠাল বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হতে পারে।

গাজীপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম খান বলেন—গাজীপুরের কাঁঠালের স্বাদ, ঘ্রাণ ও গুণগত মানে রয়েছে বিশেষ বৈশিষ্ট্য। GI স্বীকৃতি এই সম্ভাবনাকে আরও উজ্জ্বল করেছে। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে এর পরিচিতি ও চাহিদা আরও বাড়বে।

গাজীপুরের কাঁঠালের এই GI স্বীকৃতি শুধু জেলার নয়—এটি বাংলাদেশের কাঁঠাল অর্থনীতির সম্ভাবনার নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
  • © All rights reserved © 2019 alokitoswapner-bd.com - It is illegal to use this website without permission.
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102