চলতি বছরের হজ ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছর ৮৭ হাজার ১শ’ বাংলাদেশি পবিত্র হজ পালনের সুযোগ পেয়েছেন। এ বছর হজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস অভিনন্দন জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। বৈঠকে আগামী বছরের হজের জন্য ইতোমধ্যে রোডম্যাপ প্রকাশ করায় সন্তোষ প্রকাশ করেন প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস।
এ সময় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পর পর ৩ বছর সৌদি আরবে হাজি নিতে না পারায় ৪১৫টি হজ এজেন্সির লাইসেন্স বাতিলের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন জানান, আগামী বছরের হজ ব্যবস্থাপনার জন্য ইতোমধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে এবং ১০ জুলাই বাংলাদেশিদের জন্য হজ কোটা ঘোষণা করা হবে।
চলতি বছরের হজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে ধর্ম সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক জানান, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এবং সৌদি সরকারের নির্দেশনার আলোকে ২০২৬ সালের হজের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সফল ও সুশৃঙ্খল হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, হজযাত্রীদের সৌদি আরবগামী মেডিক্যাল ফিটনেস সার্টিফিকেট গ্রহণের মাধ্যমে নিবন্ধন নিশ্চিত করা হবে। বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জন অথবা ডেডিকেটেড সরকারি হাসপাতালের পরিচালক প্রদত্ত সার্টিফিকেটই গ্রহণযোগ্য হবে।
তিনি জানান, সৌদি আরবের দেওয়া টাইমলাইন ও রোডম্যাপ অনুযায়ী হজ কার্যক্রমের ক্যালেন্ডার ও চেকলিস্ট তৈরি করা হয়েছে এবং হজযাত্রী কোটার পূরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, ২০২৬ সালের হজের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয় নির্ধারিত সময়সূচি প্রকাশ করেছে। আগামী ১০ জুলাই বাংলাদেশের জন্য হজ কোটা ঘোষণা করা হবে এবং ২১ অক্টোবরের (২০২৫) মধ্যে হজযাত্রীদের চূড়ান্ত নিবন্ধন সম্পন্ন হবে। ১ ডিসেম্বর থেকে বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন এবং ৪ জানুয়ারি (২০২৬) থেকে ভেন্ডর ও কোয়াটেশন অনুমোদনের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। এরপর ২০ মার্চ থেকে হজযাত্রীদের ভিসা প্রদান শুরু হবে এবং ১৮ এপ্রিল থেকে ফ্লাইট কার্যক্রম শুরু হবে। সবশেষে ২৯ মে পবিত্র হজের টেস্ট (সেবা যাচাইকরণ) সম্পন্ন হবে।
‘লাব্বাইক’ মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে হজযাত্রীরা সহজেই প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়েছেন এবং অ্যাপটিতে ৩০ হাজার ২৩৪ জন রেজিস্ট্রেশন করেছেন।
হজ পালনকালে এ বছর ৩৮ জন ব্যক্তির স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এই মুহূর্তে সৌদি আরবের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২৪ জন। ২৫ জুন (বুধবার) পর্যন্ত দেশে ফেরত এসেছেন ৫১ হাজার ৬১৫ জন হাজি।
ধর্ম সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক আরও জানান, এখন পর্যন্ত ৮০৬টি লাগেজ হারানোর তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৭৯০টি লাগেজ পাওয়া গেছে। বাকি ১৬টি লাগেজ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
হজ এজেন্সিগুলোর কর্মদক্ষতা মূল্যায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট সূচক ব্যবহার করা হয়েছে, যার মধ্যে হজযাত্রীদের সন্তুষ্টি, চুক্তি পরিপালন এবং সরকারি নীতিমালা অনুসরণের বিষয়গুলো দেখে তাদেরকে এ প্লাস, এ, বি, সি ও ডি ক্যাটাগরিতে রাখা হবে।
এ প্লাস ক্যাটাগরি যারা অর্জন করেছে তাদেরকে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে চিঠি লিখে অভিনন্দন জানানোর নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস।
আগামী বছর যারা হজে যেতে ইচ্ছুক তারা যেন এখন থেকে লাব্বাইক অ্যাপ ব্যবহার করে তাদের নানা প্রশ্নের জবাব পান, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। একইসঙ্গে পবিত্র উমরা পালনে ইচ্ছুকরাও যেন এই অ্যাপ থেকে প্রয়োজনীয় সেবা পান, সেদিকেও নজর দিতে বলেন তিনি।