বাগেরহাটে অন্ধ আর পঙ্গুত্তের আমাবস্যা অন্ধকারের ভেতর আলো হয়ে বাঁচতে চায় ১১ বছরের রহমতুল্লাহ।বাবা দীর্ঘ ২৭বছর ধরে পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে বেঁচে আছেন, অন্য দিকে মা ২০ বছর ধরে অন্ধ,এর-ই মাজে আলো হয়ে কিরন ছড়াতে জীবন যুদ্ধে একাই লড়াই করছেন ছোট্ট রহমতউল্যাহ।
এ যেন হার না মানা এক সৈনিকের বেঁচে থাকার লড়াই,,
রহমতউল্যাহ একাই টেনে নেয় তিনজনের জীবন।
বাগেরহাট সদর উপজেলার মুক্ষাইট গ্রামের ছোট্ট এক ভাঙাচোরা ঘরে বসবাস করে ১১ বছরের শিশু রহমতুল্লাহ।
পড়াশুনা করেন মাত্র পঞ্চম শ্রেণীতে, অন্য বাচ্চাদের যখন সকাল শুরু হয় বাবা মায়ের যত্ন ভালোবাসায় তখন রহমতউল্যাহর দিনের শুরুই হয় সংগ্রাম আর দায়িত্বের বোঝা কাঁধে নিয়ে।
রহমতুল্লাহর বাবা মহিদুল ইসলাম ২৭ বছর আগে নাড়িকেল গাছ থেকে পরে গিয়ে পঙ্গু হয়, ছেলের জন্মের আগেই থেকেই তার দুই পা অচল হয়ে যায়।
আর মা পারভিন বেগম ২০০৭ সালের ভয়াবহ সিডরের সেই রাতে বন্যার আঘাতে চোখের আলো হারান। ২০ বছর ধরে তিনি সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে বেঁচে আছেন,
দু”চোখের আলো হারিয়ে হয়ে পড়েন পরনির্ভরশীল, হাটতে পারেন না অন্যের সাহায্য ছাড়া।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি পঙ্গু হওয়ার পর থেকে পারভীন বেগম নিজেই ধরেন সংসারের হাল,
ভয়াবহ সিডর যখন কেড়ে নেয় দুটি চোখ তখন দিশেহারা হয়ে পরেন পারভীন বেগম,
নিজেদের কোনো জায়গা জমি না থাকায়
তিন সদস্যের এই পরিবারটি এখন আশ্রয় নিয়েছে নিকট আত্মীয়র বাড়িতে,
১১বছর পূর্বে সেই আশ্রয় স্থলের জরাজীর্ণ ঘরে-ই জম্ম হয় ছোট্ট রহমতউল্যার,
আগে তাদের একটি ছোট দোকান থাকলেও বর্তমানে অর্থেন অভাবে বন্ধ হয়ে যায় সেটিও, ফলে পরিবারটির একমাত্র ভরসা আজ এই ১১ বছরের শিশু—রহমতুল্লাহ।
শিশু বয়স হলেও বড়দের সব দায়িত্ব মাথায় নিয়েই দিন শুরু হয় তার,
ভোরের আলো ফোটার আগেই রহমতুল্লাহকে সামলাতে হয় পঙ্গু আর অন্ধ বাবা-মাকে।
তাদের গোসল করানো থেকে শুরু করে রান্না করে খাওয়ানো পর্যন্ত একা হাতে সামলান এই ছোট্ট শিশু,
বাবাকে ধরে ধরে রোদে বসানো, পানি গরম করে গোসল করানো, গা মুছিয়ে দেওয়া—সবই তার ছোট্ট হাতের কাজ।
ঘরের সব কাজ থালা-বাসন ধোয়া থেকে শুরু করে ডাল-ভাত রান্না সবই সামলায় সে একা হাতে, এর পর ছুটে যায় স্কুলে।
স্কুল থেকে ফিরে আবার মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল ডাল চেয়ে এনে বাবা-মায়ের একবেলা খাবারের ব্যাবস্তা করেন,
এত কিছুর পরেও ছোট্ট রহমতউল্যাহর মুখে লেগে থাকে হাঁসির ঝলক,
দারিদ্র্য অন্ধত্ব আর পঙ্গুত্বের অন্ধকার ভেদ করে সে-ই হয়ে উঠেছে পরিবারের একমাত্র আলো।
মুক্ষাইট গ্রামের মানুষ তাই তাকে ডাকে অন্ধকার ঘরের আলো রহমতুল্লাহ নামে, সত্যিই যেন এ এক সৃষ্টি কর্তার রহমত।
চরম অনিশ্চয়তার মাঝেও রহমতুল্লাহর স্বপ্ন থেমে নেই।
সে চায় বড় হয়ে চাকরি করে বাবা-মায়ের মুখে ভালো খাবার তুলে দিতে। মায়ের চোখের আলো ফিরিয়ে দিতে না পারলেও অন্তত তাদের জীবনে সুখের আলো জ্বালাতে চায় ছোট্ট এই শিশু।
গোটাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বেবী রানী সেন বলেন,
এ বছর আমাদের স্কুলে রহমতুল্লাহ নামে একটি শিশু ভর্তি হয়েছে। তার বাবা-মা দুজনই দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবন্ধী।
ফলে তাকে কেউ ঠিকভাবে দেখাশোনা করতে পারে না।
ছোট ছেলে হওয়ায় নিজের পড়াশোনা বা দৈনন্দিন বিষয়গুলো বুঝে সামলানো তার জন্য খুব কঠিন। এজন্য সে নিয়মিত স্কুলে আসতে পারে না, পড়ালেখায় মনোযোগও কম।
তিনি আরও বলেন, ছেলেটির অবস্থা বিবেচনা করে আমরা শিক্ষকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি স্কুল ড্রেস’সহ প্রয়োজনীয় সব শিক্ষা উপকরণ দিয়ে তাকে সহায়তা করবো,
তবে শুধু স্কুল নয়, সমাজের অন্যান্য মানুষেরও উচিত এই অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানো। সঠিক সহায়তা পেলে রহমতুল্লাহ আবার স্বাভাবিকভাবে পড়াশোনায় ফিরতে পারবে।
এই শিশুর গল্প শুধু দারিদ্র্যের নয় এটা এক ছোট্ট হৃদয়ের বিশাল সাহসের গল্প।