আজ শুক্রবার (৩০ মে) রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র বায়তুল মোকাররম উত্তাল হয়ে ওঠে এক ভিন্নধর্মী দাবিতে—‘নিরপরাধ ইসলামপন্থী বন্দিদের মুক্তি চাই’। মানবাধিকার ও অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলন’ আয়োজিত এই বিক্ষোভের মূল দাবি ছিল—সাজাপ্রাপ্ত ব্লগার শফিউর রহমান ফারাবীর নিঃশর্ত মুক্তি।
বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেট থেকে দুপুরে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ মিছিলটি শাপলা চত্বরের দিকে অগ্রসর হয়। মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা মাইকে ঘোষণা দেন, “এই সরকার শুধু ভিন্নমত দমনেই ব্যস্ত। শফিউর রহমান ফারাবীকে ইসলামপন্থী লেখালেখির কারণেই পরিকল্পিতভাবে জেলে ঢোকানো হয়েছে।”
“একটি লেখার দায়ে আজীবনের শাস্তি!”
নেতারা বলেন, ফারাবী কোনো অপরাধ করেননি। তাঁর বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো হয়েছে, তা সবই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সংগঠনের দাবি, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে শাহবাগ আন্দোলনের কর্মী আহমেদ রাজীব হায়দারের জানাজা পড়ানোয় ইমামকে হত্যার হুমকির অভিযোগ তুলে ফেসবুক পোস্টের ভিত্তিতে ফারাবীর বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা করা হয়।
এই মামলায় ২০২৩ সালে তাঁকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু বিষয়টি এখানেই থেমে থাকেনি। ২০১৫ সালে লেখক অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাঁকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে ওই মামলায় তাঁকে আজীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
“বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থেকে যাবজ্জীবন বন্দি!”
শফিউর রহমান ফারাবী ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। বিজ্ঞানমনস্ক লেখালেখির পাশাপাশি তিনি সামাজিক মাধ্যমেও সক্রিয় ছিলেন। সংগঠনটির দাবি, তাঁর এই চিন্তাভাবনা এবং ইসলামপন্থী অবস্থানের কারণেই তাঁকে নিশানা বানানো হয়।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া একজন তরুণ বলেন, “ফারাবী আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতীক। সরকার আজ সেই স্বাধীনতা কুড়েঘরে পাঠিয়েছে।” অন্য একজন জানান, “একজন ছাত্র, একজন লেখককে শুধু ধর্মীয় মূল্যবোধের পক্ষে কথা বলায় আজীবন কারাদণ্ড? এ কেমন ইনসাফ!”
“কারামুক্তির ডাক আরও জোরালো হবে”
শাপলা চত্বরে পৌঁছানোর পর সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, যদি দ্রুত ফারাবী ও অন্যান্য ইসলামপন্থী নিরপরাধ বন্দিদের মুক্তি দেওয়া না হয়, তাহলে সামনে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। বক্তারা বলেন, “এই আন্দোলন কোনো দলের নয়, এটা দেশের প্রতিটি নির্যাতিত মানুষের।”
বক্তারা সরকারের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “জেলখানাকে মতবিরোধ দমনের অস্ত্র বানানো হয়েছে। এটা আমরা মেনে নেব না। যদি প্রয়োজন হয়, দেশের প্রতিটি মসজিদ থেকে এই আন্দোলন ছড়িয়ে দেব।”
‘বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলন’ একটি নতুন নাম হলেও তাদের বার্তা পরিষ্কার—তারা রাষ্ট্রের পক্ষে নয়, জনগণের পক্ষে। ফারাবীর মুক্তির দাবিতে আজ যে ঢেউ উঠেছে, তা ভবিষ্যতে আরও বড় স্রোতে পরিণত হবে কি না, এখন সেটাই দেখার বিষয়।
