বরিশালে হাফভাড়া না নেওয়াকে কেন্দ্র করে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে হামলা-ভাঙচুরের পর থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। শনিবার (১৫ নভেম্বর) রাতে শতাধিক বাস ও অন্তত ৫০টি পরিবহন কাউন্টার ভাঙচুর ও লুটপাটের পর অচল হয়ে পড়ে পুরো টার্মিনাল এলাকা।
রোববার সকাল থেকে টার্মিনালে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করলেও দুপুর ২টার দিকে বাস মালিকরা বিএনপির কয়েকজন স্থানীয় নেতার সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এ পরিস্থিতিতে দেশের অন্যান্য জেলার মালিকরাও বরিশাল ও দক্ষিণাঞ্চলমুখী সব রুটে বাস বন্ধ রেখেছেন। এতে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার হাজারো যাত্রী চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের অভিযোগ, শনিবার রাতে অন্তত ১০০টি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। সড়কে নামানোর মতো কোনো বাসই অক্ষত নেই। আগের রাতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও এখনও শঙ্কা কাটেনি।ঘটনার সূত্রপাত হয় শনিবার দুপুরে। সরকারি বিএম কলেজের এক শিক্ষার্থী বাসে হাফভাড়া দাবি করলে এক বাস কর্মচারীর সঙ্গে তার কথাকাটাকাটি হয়। অভিযোগ রয়েছে, বিষয়টি জানতে টার্মিনালে গেলে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়। এর জেরে সন্ধ্যায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা টার্মিনালে গিয়ে ভাঙচুর চালায়। তারা টার্মিনাল ভবন, কাউন্টার ও বাসগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে। এক পর্যায়ে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হলেও ফায়ার সার্ভিস তা নিয়ন্ত্রণে আনে।
পরিবহন শ্রমিকদের দাবি, হামলার সময় ৩০–৪০টি পরিবহন কাউন্টারে থাকা বিপুল পরিমাণ টাকা লুট করা হয় এবং ২০–২৫ জন শ্রমিক আহত হন। মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৩–৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে জানিয়েছেন মালিক–শ্রমিক নেতারা।অন্যদিকে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, হাফভাড়া চাইতে গেলে পরিবহন শ্রমিকরা তাদের সহপাঠীকে লাঞ্ছিত করেন এবং পরে প্রতিবাদে গেলে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়। শিক্ষার্থীদের দাবি, শ্রমিকরাই নিজেরা বাস ভাঙচুর করে তার দায় শিক্ষার্থীদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছেন।
সরেজমিনে টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, ভাঙচুর হওয়া বাসের সারি; একটি বাসও অক্ষত নেই। বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি মোশাররফ হোসেন বলেন, “আমরা কোনো ধর্মঘট ডাকিনি। সমস্যা হলো—একটিও বাস চলার মতো অবস্থায় নেই।” দূরপাল্লার বাস বন্ধ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “নিরাপত্তাহীনতার কারণে অন্যান্য জেলার মালিকরা বাস চালাচ্ছেন না—এটা স্বাভাবিক।”