রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৩৯ পূর্বাহ্ন

সূর্যের আলোতেই পরিষ্কার হবে বিষাক্ত বাতাস

আলোকিত স্বপ্নের বিডি
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫

রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলবে, সাইলেন্সার দিয়ে ধোঁয়া বের হবেকিন্তু সেই ধোঁয়া পরিবেশের ক্ষতি করার আগেই বাতাস থেকে বিলীন হয়ে যাবে। এমনই বাস্তব ও যুগান্তকারী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন তরুণ বিজ্ঞানী শরীফ বরকতউল্লাহ। তিনি যশোর টিটিসির সিনিয়র ইন্সট্রাক্টর এবং শহরের পোস্ট অফিস পাড়ার নীলরতনধর বাইলেনের বাসিন্দা নেওয়াজ শরীফের ছেলে।

খুলনায় চলমান আঞ্চলিক স্কিলস অ্যান্ড ইনোভেশন কম্পিটিশনে শত শত প্রজেক্টের ভিড়ে দর্শনার্থী ও বিচারকদের সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে শরীফের স্টলে। সেখানে তিনি প্রদর্শন করছেন দীর্ঘ গবেষণার ফসল—‘বাতাস পরিষ্কারক কংক্রিট ব্লক’। সাধারণ ইটের মতো দেখতে হলেও এটি মূলত পরিবেশ রক্ষার এক শক্তিশালী প্রযুক্তি।শহরের সমস্যায় শহুরে সমাধান

ইট-পাথরের দালান ও পিচঢালা সড়ক সাধারণত বাতাসকে আরও ভারী করে তোলে। কিন্তু শরীফের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহারে এই নিষ্ক্রিয় দেওয়ালগুলো গাছের মতো কাজ করবে, বাতাসকে করবে নির্মল।

নিজের অনুপ্রেরণা প্রসঙ্গে শরীফ বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিনই পত্রিকায় বায়ুদূষণে বাংলাদেশের শীর্ষ অবস্থানের খবর দেখে হতাশ হতাম। ভাবতাম, স্থায়ী সমাধান নেই? গাছ লাগানো জরুরি, কিন্তু ঢাকা বা যশোরের মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে তো জায়গা নেই। তাই ভাবলাম আমাদের চারপাশের ভবন বা রাস্তা কি কৃত্রিম গাছে রূপান্তর করা যায় না?’ দীর্ঘ গবেষণা ও ল্যাব পরীক্ষার পর সেই ভাবনার বাস্তব রূপ হলো ‘ন্যানো-কোটিং’।

কীভাবে কাজ করে প্রযুক্তিটি

শরীফ জানান, তার উদ্ভাবন মূলত টাইটানিয়াম ডাই–অক্সাইড (TiO₂)-নির্ভর একটি ফটোক্যাটালাইটিক প্রযুক্তি। এটি যেকোনো দেওয়াল, রাস্তা, ফুটপাত বা ফ্লাইওভারের গায়ে স্প্রে করে দিলেই কাজ শুরু করে। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি পড়লে এর রাসায়নিক গঠন সক্রিয় হয়ে ওঠে।গাড়ির ধোঁয়া থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস এই কোটিংয়ের সংস্পর্শে এলে বিশেষ জারণ–বিজারণ বিক্রিয়ার মাধ্যমে তা ভেঙে নিরীহ নাইট্রেট লবণে পরিণত হয়। সূর্যের আলোই এখানে ফিল্টারের কাজ করে। পরে বৃষ্টির পানিতে এই লবণ ধুয়ে ড্রেনেজ সিস্টেমে চলে যায়, যা মাটির উর্বরতাও বাড়াতে সাহায্য করে। পুরো প্রক্রিয়ায় কোনো বিদ্যুৎ বা শক্তির প্রয়োজন হয় না।

‘সেলফ-ক্লিনিং’ সুবিধা

এই প্রযুক্তির আরেকটি সুবিধা হলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিষ্কার থাকার ক্ষমতা। সুপার-হাইড্রোফিলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে দেয়ালে শ্যাওলা, ফাঙ্গাস বা ধুলোবালি জমে না। বৃষ্টি হলেই তা নিজে থেকেই ধুয়ে যায়। রক্ষণাবেক্ষণের খরচও খুব কম। একবার ব্যবহার করলে প্রায় ১০ বছর কার্যকর থাকে।

স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন

শরীফ বলেন, ‘আমি স্বপ্ন দেখি সবুজ ও স্মার্ট বাংলাদেশের। দেশের হাইওয়ে, মেট্রোরেল পিলার ও ফ্লাইওভারে পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলে বাংলাদেশ আরও সবুজ, নিরাপদ ও বাসযোগ্য হবে।’বিজ্ঞান মেলায় বিচারক ও দর্শনার্থীরা এই উদ্ভাবনের উচ্চ প্রশংসা করছেন। তাদের অনেকেই মনে করেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে যশোরের এই তরুণ বিজ্ঞানীর প্রযুক্তি পরিবেশ রক্ষায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
  • © All rights reserved © 2019 alokitoswapner-bd.com - It is illegal to use this website without permission.
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102