২০২৫ সালের সাম্প্রতিক ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ইরানকে যেসব দেশসমূহ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে সমর্থন দিচ্ছে, তাদের অবস্থান ও ভূমিকা নিচে বিশ্লেষণ করা হলো:
ইরানকে সমর্থন দিচ্ছে যেসব দেশ
১. রাশিয়া
সমর্থনের ধরণ: কূটনৈতিক, সামরিক প্রযুক্তি ও অস্ত্র বিনিময়
বিশেষ সম্পর্ক: সিরিয়া যুদ্ধের সময় থেকে রাশিয়া ও ইরান একে অপরের ঘনিষ্ঠ মিত্র। ইউক্রেন যুদ্ধের সময় ইরান রাশিয়াকে ড্রোন সরবরাহ করেছে।
অবস্থান: রাশিয়া বারবার ইরানের উপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করেছে।
২. চীন
সমর্থনের ধরণ: অর্থনৈতিক, কৌশলগত
বিশেষ সম্পর্ক: “২৫-বছরের কৌশলগত চুক্তি”র মাধ্যমে দুই দেশ ঘনিষ্ঠ হয়েছে।
অবস্থান: চীন ইরানের সাথে শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রেখে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে।
৩. সিরিয়া
সমর্থনের ধরণ: সামরিক সহযোগিতা
বিশেষ সম্পর্ক: সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পক্ষে ইরান দীর্ঘদিন ধরে সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে।
অবস্থান: সিরিয়া-ইরান একে অপরের রাজনৈতিক ও সামরিক মিত্র।
৪. লেবানন (হিজবুল্লাহ)
সমর্থনের ধরণ: সামরিক ও আদর্শিক
বিশেষ সম্পর্ক: হিজবুল্লাহ ইরানের অর্থ ও অস্ত্র সহায়তায় চলে এবং ইরানের আদর্শে অনুপ্রাণিত।
অবস্থান: ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সরাসরি সংঘাতে অংশগ্রহণ করে থাকে।
৫. ইরাকের শিয়া মিলিশিয়া দলসমূহ
সমর্থনের ধরণ: সামরিক
বিশেষ সম্পর্ক: ইরাকের একাধিক শিয়া মিলিশিয়া দল ইরানের সাথে যুক্ত।
অবস্থান: ইরানের হয়ে প্রভাব খাটায়, বিশেষত মার্কিন ঘাঁটির বিরুদ্ধে হামলায় সক্রিয়।
৬. ইয়েমেন (হুথি বিদ্রোহী)
সমর্থনের ধরণ: পরোক্ষ সামরিক সহায়তা
বিশেষ সম্পর্ক: হুথিরা ইরানের আদর্শে প্রভাবিত এবং ইরান থেকে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র সহায়তা পায়।
অবস্থান: সৌদি আরব ও ইসরায়েল বিরোধী অবস্থানে থাকে।
৭. কাতার (আংশিক)
সমর্থনের ধরণ: মধ্যস্থতা ও কিছু নীতিগত সহমত
বিশেষ সম্পর্ক: কাতার ইরানবিরোধী সৌদি জোটে যোগ না দিয়ে একধরনের নিরপেক্ষ সমর্থন দেয়।
—
অন্যান্য দেশের অবস্থান:
তুরস্ক: ইরানকে পুরোপুরি সমর্থন না করলেও ইসরায়েলের নীতির সমালোচনা করে।
ভারত: নিরপেক্ষ থেকেও ইরানের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রাখে, কিন্তু ইসরায়েলের সাথেও ঘনিষ্ঠ।
ভেনেজুয়েলা, উত্তর কোরিয়া: পশ্চিমবিরোধী নীতির কারণে মাঝে মাঝে ইরানকে সমর্থন করে।
ইরানকে যেসব দেশ সমর্থন দিচ্ছে তারা সাধারণত পশ্চিমা প্রভাব ও ইসরায়েলবিরোধী অবস্থানে ঐক্যবদ্ধ। সমর্থন কখনও সরাসরি (যেমন রাশিয়া, সিরিয়া, হিজবুল্লাহ), আবার কখনও কৌশলগত (যেমন চীন, কাতার)। এই জোটে বেশিরভাগই মার্কিনবিরোধী শক্তি হিসেবে পরিচিত।