কারওয়ান বাজারে একদল মানুষ ঘিরে ধরার পর পুলিশ তাকে হেফাজতে নেয়; আদালতে হাজির হওয়ার শর্তে ৪ ঘণ্টা পর মাঝরাতে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ঢাকার কারওয়ান বাজারে নিজের অফিস থেকে বের হয়ে একদল লোকের তোপের মুখে পড়া মুন্নী সাহাকে হেফাজতে নেওয়ার পর পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ‘স্বপ্রণোদিত’ হয়ে তাকে গ্রেপ্তার না করায় এবং তার বিরুদ্ধে থাকা মামলার প্রেক্ষিতে ‘আদালতে হাজির হওয়ার শর্তে’ ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী তাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক।
শনিবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে কারওয়ান বাজারে নিজের কর্মস্থল ‘এক টাকার খবর’ অফিস থেকে বের হলে একদল লোক মুন্নী সাহাকে ঘিরে ধরেন। বিষয়টি নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে খবর পেয়ে সেখান থেকে তাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ।
এরপর মুন্নী সাহার বিরুদ্ধে চারটি মামলার তথ্য দিয়ে তাকে মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নেওয়ার কথা জানান তেজগাঁও থানার ওসি মোবারক হোসেন।
এর চার ঘণ্টা পরই তাকে মুক্ত করার তথ্য দিয়ে ডিবি কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, “কারওয়ান বাজারে লোকজন ঘিরে ধরলে তিনি আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েন। একজন নারী হিসেবে পুলিশ তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে তেজগাঁও থানায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে পরে তাকে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়।
“তার আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়া এবং সার্বিক দিক বিবেচনায় সিআরপিসি’র ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে থাকা চারটি মামলায় আদালতে হাজির হওয়ার শর্তে আমরা তাকে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দিচ্ছি।”
ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তিকে পুলিশ জামিন অযোগ্য অপরাধে আটক করলেও তাকে জামিন দেওয়া যেতে পারে। এই ধারার অধীন জামিন অযোগ্য অপরাধে জামিন পাওয়া অভিযুক্ত ব্যক্তির আইনগত অধিকার নয়; বরং জামিন অযোগ্য অপরাধে জামিন দেওয়া আদালতের বিবেচনামূলক ক্ষমতা।
এই ধারা অনুযায়ী মুন্নী সাহাকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলে তার বিরুদ্ধে যেসব থানায় মামলা রয়েছে, সেসব থানার ওসিরা এসে ‘প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া’ সম্পন্ন করার পর তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এর আগে তেজগাঁও থানার ওসি মোবারক বলেছিলেন, জুলাই-অগাস্টের গণআন্দোলনের মধ্যে ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও মিরপুরের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে যাত্রাবাড়ীতে গুলিতে নাঈম হাওলাদার (১৭) নামে এক শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় তার বাবা মো. কামরুল ইসলামের করা মামলায় শেখ হাসিনা ও তার সরকারের একাধিক মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ নেতাদের আসামি করা হয়েছে। ওই মামলায় এটিএন নিউজের সাবেক বার্তা প্রধান মুন্নী সাহাসহ সাত সাংবাদিককেও আসামি করা হয়।
অন্যরা হলেন- একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু, একাত্তর টিভির সাবেক বার্তা প্রধান সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, সময় টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আহমেদ জোবায়ের, একাত্তর টিভির প্রিন্সিপাল করেসপনডেন্ট ফারজানা রুপা, একাত্তর টিভির চাকরিচ্যুত হেড অব নিউজ শাকিল আহমেদ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান।
গণআন্দোলনে সরকার পতনের পর মুন্নীর বিরুদ্ধে মামলা ছাড়াও গত ৬ অক্টোবর তার সব ধরনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চায় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। সংস্থাটির চিঠিতে তার আমানত, ঋণ, ক্রেডিট কার্ড, ফরেন ট্রেড, এক্সচেঞ্জ, লকার ও অফশোর ব্যাংকিংয়ের তথ্য চাওয়া হয়।
জাতীয় পত্রিকা দৈনিক আজকের কাগজের মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেছিলেন মুন্নী সাহা। কাজ করেন ভোরের কাগজেও।
১৯৯৯ সালে একুশে টিভির প্রতিবেদক হন। ২০০৩ সালে এটিএন বাংলার বিশেষ প্রতিবেদক ও ২০১০ সাল থেকে এটিএন নিউজের প্রধান সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেন।
এরপর ২০১৬ সালে এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী সম্পাদক হন। পরে মালিকপক্ষের সঙ্গে বিরোধের জেরে ২০২৩ সালের মে মাসে এটিএন নিউজ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর ‘এক টাকার খবর’ নামে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের সঙ্গে যুক্ত হন। সবশেষ সেখানেই কাজ করছিলেন তিনি।
সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের সরকারের মন্ত্রী-এমপি ছাড়াও কয়েকজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গত ২১ অগাস্ট একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক হেড অব নিউজ শাকিল আহমেদ ও সাবেক প্রিন্সিপাল করেসপনডেন্ট ফারজানা রূপাকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এরপর ১৬ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের ধোবাউড়া সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার হন একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু ও দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত।
গণআন্দোলনে হত্যা মামলায় তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।