বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
এইচএসসি পাসে লাজ ফার্মায় নিয়োগ, নিচ্ছে ক্যাশ অফিসার। টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর আগুনে পুড়ে ভূষ্মিভুত। রামপাল মোংলার সুবিধাবঞ্চিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান। সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ গ্রেপ্তার। একদিনে ১৩১২ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে, ৬ জনের মৃত্যু। যুবদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে,ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পিং, বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত। উৎসব মুখর পরিবেশে চলছে বণিক সমিতির ভোট গ্রহণ। লেখক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করলেন কয়রা উপজেলার কৃতি-সন্তান মাষ্টার শাহানূর আলম।

কামার পল্লীতে নেই ব্যস্ততা/কামার আছে, কর্ম নেই/কামার পল্লীতে নেই টুং টাং শব্দ/টুং টাং শব্দে মুখরিত কামার পল্লীতে এখন নীরবতা/ কামার পল্লীতে নেই আগের জৌলুশ।

আলোকিত স্বপ্নের বিডি
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই, ২০২১

কামার পল্লীতে নেই ব্যস্ততা/কামার আছে, কর্ম নেই/কামার পল্লীতে নেই টুং টাং শব্দ/টুং টাং শব্দে মুখরিত কামার পল্লীতে এখন নীরবতা/ কামার পল্লীতে নেই আগের জৌলুশ।

 

 

নারায়ণ সরকার, রূপগঞ্জঃ

 

 

 

 

প্রখর আগুনের তাপে শরীরের ঘাম ঝরিয়ে রাতদিন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে কর্মকাররা। কোরবানির পশু জবাইসহ সংসারের নিত্যদিনের কাজ করার জন্য দা, ছুরি, চাকু তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তারা। বিশেষ করে কোরবানির ঈদ আসলে তাদের আয়টা বেড়ে যায়। সেইসঙ্গে ব্যস্ততাও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। কিন্তু বরাবরের মতো এইবার কামারপাড়ায় আগের মতো নেই হাঁকডাক। ক্রেতার তেমন চাপও নেই। এবারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্নরকম। ২/১ জন আসলেও তারা পুরাতন ছুরি বা চাকু মেরামত করতে আসছেন।
লকডাউনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মানুষের আয় রোজগার যেমন কমেছে, তেমনি কোরবানী করার মানুষের সংখ্যাও কমেছে। নিত্যদিনের খাবার জোগার করতেই হিমশিম খাচ্ছেন মানুষ। লকডাউনে দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকা কামর পল্লীতে এখন যেন সুনশান নীরবতা চলছে। নতুন না বানিয়ে পুরাতন যন্ত্রপাতিতে সান দিয়ে কাজ করবেন অনেকে। তাছাড়া বাড়িতে গিয়েই কিছু লোক পুরাতন যন্ত্রপাতিতে সান দিয়ে আসেন। তাই কামার পল্লীতে এখন আর আগের মত মানুষ আসেন না।
আর ক’দিন বাদেই কোরবানীর ঈদ। পশু কোরবানীর কাজে ব্যবহৃত চাকৃ, ছুড়ি, দা, বটি তৈরির জন্য মানুষ এমন সময় কামার বাড়িতে দৌড়াঝাপ করলেও এবার চিত্র অন্য রকম। অন্য কোরবানীর ঈদের এ সময় কামার বাড়িতে টুং টাং শব্দে মুখরিত থাকত। কর্মকাররাও দম ফালানোর ফুসরত পেতেন না। প্রায় বছরাধিকাল ধরে মহামারী করোনার থাবায় অর্থনীতি যেমন বিপর্যস্ত , মানুষের জীবনও অনেক পরিবর্তন এসেছে।
উপজেলার বিভিন্ন কামারপট্টিতে গিয়ে দেখা যায়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকেও মিলছে না ক্রেতা। ফলে পুরনো দা-বটিতে পাইন (ধার) দেয়ার জন্য আসা লোকজনদের নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার কারিগররা।


উপজেলার সুজন কর্মকার নামে এক কারিগর জানান, আগে মানুষ নিজেরাই নিজেদের কোরবানির পশু জবাই ও কাটার কাজ করতেন। এখন তা করে দিচ্ছে পেশাদার কসাইরা। তাই অনেকে দা-বটি কিনছেনই না।
তিনি বলেন, বর্তমানে দা/বটি কেজি প্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, চাপাতি ৪৫০ টাকা, চামড়া ছাড়ানোর ছুরি ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া জবাই করাসহ অন্যান্য ছুরি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৫০ টাকা দরে। কাঁচা লোহার পণ্যের দাম একটু কম রয়েছে।
গতকাল দুপুরে রূপগঞ্জের উত্তরপাড়া, দেইলপাড়া, নয়ামাটির কামারপাড়ায় কর্মকারদের সঙ্গে কথা বললে মেলে এমন তথ্য। কর্মকাররা জানান, কোরবানির ঈদ আসলেই দা, ছুরি, চাকু তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়তো ক্রেতারা। কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে আসলেও রূপগঞ্জে কয়েক শতাধিক কর্মকার অলস সময় পার করছে। গোটা উপজেলায় একই চিত্র দৃশ্যমান।
ক্রেতাদের তেমন চাপ না থাকায় সংসার চালাতেও কষ্ট হচ্ছে তাদের। দেইলপাড়া গ্রামের শিপন কর্মকার (৪০) বলেন, ঈদ ঘনিয়ে আসলেও ক্রেতা নেই। আগে প্রতিদিন ২-৩ হাজার টাকা বেচাকেনা করতে পারতাম। এখন মাত্র ১-২ শ’ টাকা বেচতে পারি।
উত্তম কর্মকার (৪৫) বলেন, কর্মকার আছে। ক্রেতা নেই। কর্ম নেই। সংসার আর চলে না। খুবই বাজে অবস্থা। লকডাউনের কারণে মানুষের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। হাতে টাকা পয়সা নাই। তাই লোকজন আসে না। দক্ষিণবাঘ গ্রামের সুমন কর্মকার (২৫) ও বিপ্লব কর্মকার (৩৫) বলেন, লোহার দাম বেড়ে গেছে। দু’চারজন আসলেও পুরাতন কাজ নিয়ে আসেন। নতুন করে কেউ দা, ছুরি, চাকু তৈরি করতে দেয় না।
কারিগর হরিপদ কর্মকার বলেন, ‘দিন দিন লোহা ও কয়লার দাম বেড়েই চলেছে। তাই চাপাতি, দা-বটি, ছুরির দামও বাড়তির দিকে। আগে মানুষ প্রতি বছর কোরবানির সময় এগুলো নতুন করে কিনতেন। এখন পণ্যগুলোর দাম বেড়ে যাওয়ায় ৩০/৪০ টাকা খরচ করে পুরাতন চাপাটি দা-বটি, ছুরিই পাইন দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।’
তিনি বলেন, এ পেশার সঙ্গে জড়িতরা দিন দিন খারাপ অবস্থায় চলে যাওয়ায় এখন কামাররা কোনও মতে টিকে আছে। এ ব্যাপারে উপজেলার কর্মকার সমিতির সভাপতি কালিপ্রদ রায় বলেন, কর্মকারদের দুর্দিন চলছে। সরকারের মানবিক দৃষ্টি কর্মকারদের দিকে দেয়া অতিব জরুরী। তা না হলে এ শিল্পে কর্মরত কারিগড়রা ধ্বংস হয়ে যাবে। এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

আপনার মন্তব্য লিখুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
  • © All rights reserved © 2019 alokitoswapner-bd.com - It is illegal to use this website without permission.
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102