শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:১৮ অপরাহ্ন

প্রতিদিন ২০০০ পর্যটক যাবে সেন্টমার্টিনে, মানবে ১২ নির্দেশনা

আলোকিত স্বপ্নের বিডি
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৫

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ১ ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল শুরু হচ্ছে। থাকছে রাতে থাকার সুযোগও। তবে দৈনিক দুই হাজারের বেশি পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবেন না। মানতে হবে ১২ নির্দেশনা। কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া জেটিঘাট থেকে সকাল ৭টায় জাহাজ ছেড়ে যাবে। পরের দিন বেলা ৩টায় সেন্টমার্টিন থেকে সেই জাহাজ কক্সবাজারে ফিরে আসবে। আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা দুই মাস পর্যটক ভ্রমণ করতে পারবে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বাসসকে বলেন, এমভি কর্ণফুলি এক্সপ্রেস, এমভি বারো আউলিয়া, কেয়ারি সিন্দাবাদ ও কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন নামের চারটি জাহাজ কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন নৌপথে চলাচলের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি পেয়েছে।

শাহিদুল আলম আরও বলেন, সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন। আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্টমার্টিন যাতায়াত করবে। তার জন্য সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।

পর্যটকবাহী জাহাজ মালিকদের সংগঠন সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় নভেম্বর মাসে কোনো পর্যটক সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে যেতে আগ্রহ দেখাননি। এ কারণে জাহাজ চলাচলও বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে ১ ডিসেম্বর থেকে টানা দুই মাস রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা আছে। পর্যটকেরাও দ্বীপ ভ্রমণে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাই ১ ডিসেম্বর থেকে জাহাজ চলাচল শুরু করা হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, পর্যটক পারাপারের সময় জাহাজগুলোকে কঠোর নজরদারিতে রাখা হবে। দুই হাজারের বেশি পর্যটক যেতে দেওয়া হবে না। এ জন্য নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাট ও সেন্ট মার্টিন জেটিঘাটে পৃথক তল্লাশির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সেন্টমার্টিন ভ্রমণের ব্যাপারে গত ২২ অক্টোবর ১২টি নির্দেশনাসহ এক প্রজ্ঞাপন জারি করে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্টমার্টিন দ্বীপে কোনো নৌযান চলাচল করতে পারবে না। পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। সেখানে প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।

দ্বীপে ভ্রমণের সময়সূচি এবং পর্যটক উপস্থিতিও এবার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় ভ্রমণ করতে পারবেন। রাত্রিযাপন করা যাবে না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাত্রিযাপনের অনুমতি থাকবে। ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের বেশি পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণ করতে পারবেন না।

সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে দ্বীপে রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি বা বারবিকিউ পার্টি করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা ক্রয়-বিক্রয়, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এ ছাড়া সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।

নিষিদ্ধ পলিথিন বহন করা যাবে না এবং একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক, যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, ৫০০ ও ১০০০ মিলিলিটারের প্লাস্টিক বোতল ইত্যাদি বহন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এই নতুন নির্দেশনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেন্টমার্টিন দ্বীপের নাজুক পরিবেশ ও অনন্য জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত থাকবে এবং দ্বীপটি দায়িত্বশীল ও পরিবেশবান্ধব পর্যটনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে উঠবে বলে আশা করছে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

আপনার মন্তব্য লিখুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
  • © All rights reserved © 2019 alokitoswapner-bd.com - It is illegal to use this website without permission.
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102