শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৩১ অপরাহ্ন

ঠোঁটে চুমুর উৎপত্তি ২ কোটি বছর আগে

আলোকিত স্বপ্নের বিডি
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৫

মানুষ শুধু রোমান্সের জন্যই চুমু দেয় না- এটি এমন এক আচরণ, যা প্রাচীন প্রজাতি এবং অন্যান্য প্রাণীর মধ্যেও দেখা গেছে। সম্প্রতি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানী ড. মাতিলডা ব্রিন্ডল এবং তার আন্তর্জাতিক দলের গবেষণা দেখিয়েছে, চুমুর ইতিহাস মানব সভ্যতার গড়ে ওঠার অনেক আগেই শুরু হয়েছিল।

ব্রিন্ডল বলেন, ‘এই প্রথম আমরা চুমুর ইতিহাস পরীক্ষা করার জন্য একটি বিস্তৃত বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোণ ব্যবহার করেছি। এই অনুসন্ধান প্রমাণ করে যে চুমুর মতো আচরণ শুধুমাত্র মানুষ নয়, বরং আমাদের প্রাচীন আত্মীয়দের মধ্যেও বিদ্যমান ছিল। এটি বিবর্তনের একটি চমকপ্রদ অধ্যায়।’

চুমুর বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা

গবেষকরা প্রথমে চুমুর সংজ্ঞা নির্ধারণ করেন। অন্যান্য মুখ-সাক্ষাৎ আচরণের মতোই চুমুরও অনেক রূপ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মা ওরাঙ্গুটান বা শিম্পাঞ্জি তাদের শিশুকে মুখ থেকে মুখে খাবার দেন, আবার কিছু প্রাণী আধিপত্য বা প্রতিযোগিতার জন্য ‘চুমুর লড়াই’ করে।

তবে গবেষকরা চুমুকে সংজ্ঞায়িত করেছেন, ‘অ-আক্রমণাত্মক, মুখ থেকে মুখের যোগাযোগ, যেখানে খাদ্য স্থানান্তর জড়িত নয়।’ এই সংজ্ঞার ভিত্তিতে প্রাইমেট, যেমন- বোনোবো, গরিলা, শিম্পাঞ্জি, ওরাংওটাং, ম্যাকাক এবং বানর- সবকেই চুমু করতে দেখা গেছে।

চুমুর ইতিহাস

গবেষকরা বেয়েসিয়ান মডেলিং ব্যবহার করে চুমুর বিবর্তনীয় ইতিহাস পুনর্গঠন করেছেন। মডেলটি এক কোটি বার চালিয়ে তারা নিশ্চিত হন যে, প্রায় ২.১৫ কোটি থেকে ১.৬৯ কোটি বছর আগে বড় বানরের সাধারণ পূর্বপুরুষের মধ্যে চুমুর বিকাশ হয়েছিল। তবে ম্যাকাসিনা এবং প্যাপিওনিনা (ম্যাকাক ও বানারসহ) এই আচরণে অন্তর্ভুক্ত ছিল না, যা ইঙ্গিত দেয় যে এই গোষ্ঠীর আধুনিক প্রজাতি আলাদাভাবে চুমু শিখেছে।

গবেষকরা মনে করেন, চুমুর উৎপত্তি হতে পারে মায়ের কাছ থেকে খাবার চিবানো বা শিশুকে খাদ্য দেওয়ার অভ্যাস থেকে, যা ধীরে ধীরে সামাজিক বা প্রজনন প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়েছে।

নিয়ান্ডারথালও চুমু করত

এদিকে, নিয়ান্ডারথাল ও আধুনিক মানুষও চুমু করেছিল। যদিও নৃবিজ্ঞানের দিক থেকে এটি নতুন তথ্য নয়, তবে নতুন গবেষণার মাধ্যমে বোঝা যায়- চুমুর আচরণ মানব পূর্বপুরুষদের মধ্যে বৈচিত্র্যময় ছিল।

প্রাচীন দন্তবিজ্ঞানের প্রমাণও দেখিয়েছে, প্রায় ৪৮ হাজার বছর আগে বেঁচে থাকা নিয়ান্ডারথালের মুখে এমন জীবাণু ছিল, যা আধুনিক মানুষের মুখেও পাওয়া যায়- যা চুমুর সম্ভাব্য অস্তিত্বের ইঙ্গিত দেয়।

গবেষকরা বলেছেন, চুমু প্রজনন বা সামাজিক বন্ধনকে বাড়ানোর একটি মাধ্যম হতে পারে। এটি সম্ভাব্য সঙ্গীর স্বাস্থ্য, জেনেটিক সামঞ্জস্যতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং মুখের মাইক্রোবায়োম মূল্যায়নের সুযোগ দিতে পারে।

এছাড়া, চুমু সামাজিক বন্ধনকে দৃঢ় করতে এবং জীবাণু বিনিময়ের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়াতেও সাহায্য করতে পারে।

অন্যান্য প্রাণীর মধ্যেও চুমু

চুমুর আচরণ শুধু মানুষ ও প্রাইমেটে সীমাবদ্ধ নয়। নেকড়ে, কাঠবিড়াল, মেরু ভল্লুক এমনকি অ্যালবাট্রস পাখির মধ্যেও এটি দেখা যায়। এই আচরণ বিবর্তনীয় ইতিহাসে মানবের বাইরে কীভাবে বিস্তৃত তা বোঝার জন্য গবেষকরা ‘ইভাল্যুশনারি ফ্যামিলি ট্রি’ তৈরি করেছেন।

ড. ব্রিন্ডল বলেন, ‘এটি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে এই আচরণটি শুধুমাত্র মানুষ নয়, আমাদের অন্যান্য আত্মীয় প্রাণীর সঙ্গেও শেয়ার করা হয়। মানুষের কাছে এটি রোমান্টিক মনে হলেও, এটি অন্য প্রাণীর ক্ষেত্রে তুচ্ছ বা হাস্যকর হিসেবে দেখা উচিত নয়।’

যদিও চুমুর বিবর্তনীয় সময়কাল জানা গেলেও ‘কেন’ এটি এত ব্যাপকভাবে বিদ্যমান তা এখনো রহস্য। তবে ব্রিন্ডল আশা করছেন- এই গবেষণা চুমুর উৎস ও কার্যকারিতা নিয়ে আরও গভীর অনুসন্ধান চালানোর পথ খুলবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
  • © All rights reserved © 2019 alokitoswapner-bd.com - It is illegal to use this website without permission.
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102