ভোলা–বরিশাল সেতুর প্রয়োজনীয়তা আজ আর কাউকে আলাদা করে বোঝাতে হয় না। প্রতিদিন নৌপথে যাতায়াত করা লাখো মানুষের ভোগান্তিই প্রমাণ করে এই সেতু কতটা অপরিহার্য। ভোলার মানুষ হিসেবে বিষয়টি আরও ব্যক্তিগত ও স্পর্শকাতর বলে জানিয়েছেন বক্তারা।
বর্তমানে ২০ লাখেরও বেশি মানুষ নৌপথের ওপর নির্ভর করে চলাচল করেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে যাতায়াত স্বাভাবিক থাকে, কিন্তু সামান্য ঝড়, দমকা হাওয়া বা ঘন কুয়াশা পড়লেই সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন ভোলা যেন এক মুহূর্তেই দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা হয়ে পড়ে।
জরুরি পরিস্থিতিতে মানুষের কষ্ট আরও নির্মম রূপ নেয়। অসুস্থ রোগীকে রাতের বেলা বরিশাল বা ঢাকায় নিতে হলে যে দুঃসহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, তা কেবল ভোলার মানুষই জানে। সেতুর অভাবে সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে কিংবা দেরিতে হাসপাতালে পৌঁছানোর কারণে ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যাও নেহাত কম নয়।
ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও একই দুরবস্থা। পণ্য পরিবহন সবসময় ঝুঁকিতে থাকে, আর আবহাওয়া খারাপ হলে ব্যবসা থমকে যায়। কৃষকরা বাজারে ফসল তুলতে না পেরে ন্যায্য দাম পান না। উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন, পুরো জেলার অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ে।
বছরের পর বছর ধরে “সেতু হবে”, “শিগগির কাজ শুরু হবে”—এমন প্রতিশ্রুতি শোনার পরও দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় মানুষের মধ্যে হতাশা জমে উঠেছে। ভোলার মানুষ বাড়তি সুবিধা দাবি করে না; দেশের অন্য জেলার মতো সুষ্ঠু ও আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থাই তাদের প্রধান চাওয়া।
এই সেতু নির্মিত হলে ভোলা–বরিশাল–ঢাকা রুট দ্রুত ও সহজ হবে। চিকিৎসা, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, পর্যটনসহ নানামুখী উন্নয়নের নতুন দরজা খুলবে। বিনিয়োগ বাড়বে, কর্মসংস্থান তৈরি হবে, মানুষের জীবনমান উন্নত হবে—এটি নিশ্চিত মনে করছেন স্থানীয়রা।
তাদের মতে, ভোলা–বরিশাল সেতু কেবল একটি অবকাঠামো নয়; এটি ভোলার মানুষের অধিকার, নিরাপত্তা, মর্যাদা ও ভবিষ্যতের প্রতীক। প্রতিদিন অনিশ্চিত নৌপথে জীবন কাটানো মানুষের জন্য এই সেতুই হতে পারে নিশ্চিন্ততার একমাত্র পথ।
তাই এখন প্রয়োজন দৃশ্যমান পদক্ষেপ। ভোলা–বরিশাল সেতু আর কোনো রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির বিষয় নয়—এটি সময়ের দাবি এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার।