বাংলাদেশে একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে নিয়ম মেনে জীবন যাপন করেও নিরাপদ থাকা আজ আর নিশ্চিত কিছু নয়।
রাস্তা দিয়ে হাঁটা, কর্মস্থলে যাওয়া, সন্তানকে স্কুলে পাঠানো, এমনকি পরিবারের সঙ্গে রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়া—সবকিছুই এখন যেন জীবন ঝুঁকির অংশ।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একের পর এক দুর্ঘটনা এবং প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা আমাদের বারবার প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাচ্ছে: এই দেশে নাগরিকের নিরাপত্তার দায়িত্ব কে নিচ্ছে?
❝ দুর্ঘটনা, না কাঠামোগত ব্যর্থতা? ❞
রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা—যেগুলোর অনেকগুলোই প্রতিরোধযোগ্য ছিল।
খোলা ম্যানহোল, ঝুঁকিপূর্ণ নির্মাণ, বৈধতা-বিহীন গ্যাসলাইন, নিয়ম না মানা যানবাহন—সবকিছুই যেন একেকটি চলমান ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানায়, ২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন প্রায় ৭ হাজার মানুষ।
শুধু সড়কে নয়, নির্মাণাধীন ভবন থেকে ইট পড়ে, বৈদ্যুতিক খুঁটি ছিঁড়ে কিংবা ভবন ধসে অসংখ্য জীবন ঝরে গেছে।
একটি নির্মম উদাহরণ হচ্ছে—মাইলস্টোন কলেজে প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে ক্লাসরুমে থাকা শিক্ষার্থীদের হতাহত হওয়ার ঘটনা।
একটি বহু বছরের পুরনো যুদ্ধবিমান, যেটি জাদুঘরে থাকার কথা, সেটি কীভাবে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় অনুশীলনে ব্যবহৃত হয়?
এ প্রশ্ন শুধু সেই পরিবারগুলোর নয়, যাদের সন্তান হারিয়ে গেছে—এ প্রশ্ন আজ পুরো জাতির।
❝ নারী ও শিশুর জন্য প্রতিদিনের ভয় ❞
একজন নারীর জন্য গণপরিবহন কিংবা কর্মক্ষেত্র—কখনোই পুরোপুরি নিরাপদ ছিল না।
আসক এর তথ্যমতে, ২০২৩ সালে ১,২০০-এর বেশি ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। অনেকেই মুখ খোলেননি, যারা খুলেছেন—তাদের অনেকেই বিচার পাননি।
শিশুরাও বাদ যাচ্ছে না।
খেলতে গিয়ে গর্তে পড়ে মৃত্যু, বাসার সামনে রাস্তা পার হতে গিয়ে গাড়িচাপা, কিংবা স্কুলে যাওয়ার পথে প্রাণ হারানো—এসব ঘটনা যেন সংবাদপত্রের প্রতিদিনের শিরোনাম।
❝ বিচারহীনতা, আরেকটি নিরব হত্যাকাণ্ড ❞
প্রতিটি দুর্ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ ঝরে, সংবেদনশীল পোস্ট হয়, শোক বার্তা আসে।
কিন্তু যা আসে না, তা হলো বিচার।
দীর্ঘসূত্রতা, প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ এবং তদন্তের অভাবে অপরাধীরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।
নিহতদের পরিবারগুলো বছরের পর বছর লড়াই চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ে—অনেকেই ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা ছেড়ে দেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শুধুই অব্যবস্থা নয়—রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার প্রতিফলন।
❝ নাগরিক জীবনের দাম কি তবে এতটাই কম? ❞
এই দেশে নিয়ম মেনেও কেউ নিরাপদ নয়। আইন জানলেও কেউ রক্ষা পায় না।
এ এক কঠোর বাস্তবতা, যেখানে নাগরিকের জীবন যেন সবচেয়ে কম মূল্যবান।
আমরা কি এমন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম?
একটি ইট, একটি গর্ত, একটি গাফিলতিই যেখানে কারো জীবন কেড়ে নিতে পারে, সেখানে নাগরিকের অস্তিত্ব যেন প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মুখে।