বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের কয়েকটি ধারা অসাংবিধানিক ঘোষণা করে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) হাইকোর্ট ১৩৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছে।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর যৌথ স্বাক্ষরে প্রকাশিত রায়ে বলা হয়েছে, সংশোধনীর বিতর্কিত অনুচ্ছেদগুলো সংবিধানের মৌলিক কাঠামো এবং গণতন্ত্রের পরিপন্থী।
রায়ে পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ অনুচ্ছেদকে বাতিল করা হয়েছে। আদালত বলেছে, এই দুটি অনুচ্ছেদ সংবিধানের মূল কাঠামো ধ্বংস করেছে। একই সঙ্গে সংবিধানে সংযোজিত ৭ক, ৭খ এবং ৪৪ (২) অনুচ্ছেদ অসাংবিধানিক ঘোষণা করে বাতিল করা হয়েছে।
৭ক অনুচ্ছেদে সংবিধান বাতিল বা স্থগিত করাকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল
৭খ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলী সংশোধনযোগ্য নয়
৪৪ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতা অক্ষুণ্ণ রেখে অন্য কোনো আদালতকে সেই ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ দেওয়া যাবে
রায়ে বলা হয়েছে, পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পুরোপুরি বাতিল হচ্ছে না। যেসব ধারা অবশিষ্ট থাকবে, সেগুলো পরবর্তী জাতীয় সংসদ জনমতের ভিত্তিতে প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যালোচনা ও পরিবর্তন করতে পারবে। এর মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বীকৃতি এবং ২৬ মার্চের ভাষণ সংক্রান্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত আছে।
রায়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে গণভোটের বিধান পুনর্বহাল করা হয়েছে। ১৯৯১ সালের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোটের বিধান যুক্ত হয়, যা পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বিলুপ্ত করা হয়েছিল। হাইকোর্ট এই বিলুপ্তিকে মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী আখ্যা দিয়ে ৪৭ ধারা বাতিল করেছে এবং ১৪২ অনুচ্ছেদের গণভোট সংক্রান্ত বিধান পুনরায় কার্যকর করেছে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রায়ে সংবিধানের মূল কাঠামো রক্ষার নীতিকে পুনরায় জোর দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক মহল ও সংশ্লিষ্ট মহলে এ রায় নিয়ে নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।