শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৩৪ অপরাহ্ন

টঙ্গীতে যৌথবাহিনীর অভিযান, আটক অর্ধশতাধিক

আলোকিত স্বপ্নের বিডি
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ২ মার্চ, ২০২৫

গাজীপুরের টঙ্গীর হাজী মাজার বস্তিতে মাদক ও সন্ত্রাসবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছে যৌথ বাহিনী। শনিবার (০১ মার্চ) সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে শুরু হওয়া এই অভিযানে বিজিবি, র‍্যাব, পুলিশ ও আর্মড পুলিশের প্রায় ২৬০ সদস্য অংশ নেন।

যৌথ বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, অভিযানের সময় ৬০ জনকে আটক করা হয়, যাদের মধ্যে মাদক ব্যবসায়ী, চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারীরা রয়েছে । এ সময় বাহিনী বিভিন্ন স্থাপনায় তল্লাশি চালিয়ে নগদ ৩৯ হাজার ৪০০ টাকা, ছোরা ২টি, চাকু ২টি, কাটিং প্লাস ১টি, সেলাই রেঞ্জ ১টি, হার্ডডিস্ক ৪টি, বাটন মোবাইল ৪টি এবং ৪ লিটার বাংলা মদ উদ্ধার করে। এসব সামগ্রী মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে ব্যবহৃত হতো বলে ধারণা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

দীর্ঘদিন ধরে টঙ্গীর হাজী মাজার বস্তি মাদক ব্যবসার মূল কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। স্থানীয়দের অভিযোগ, বস্তিটিকে ঘিরে একাধিক চক্র সক্রিয়, যারা প্রকাশ্যেই মাদক বিক্রি করে। টঙ্গী বাজার সংলগ্ন হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাদক চোরাকারবারিরা এখানে এসে মাদক সরবরাহ করে। এখান থেকেই তা গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। শুধু মাদক ব্যবসা নয়, বস্তির অপরাধীরা ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও নানা অপরাধে জড়িত বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

স্থানীয় এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখানে মাদকের কারবার এতটাই ভয়াবহ যে দিনের বেলা দোকানদার, শ্রমিক, পথচারীরা আতঙ্কে থাকেন। সন্ধ্যার পর অনেক জায়গায় মাদকসেবীদের ভিড় লেগে যায়। প্রশাসন অভিযান চালালেও কিছুদিন পর আবার একই চিত্র দেখা যায়।

একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, আগে পুলিশকে বারবার অভিযোগ জানানো হলেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে এবারের যৌথ বাহিনীর অভিযানে তারা কিছুটা হলেও স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।

 

 

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. রায়হানুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই বস্তি অপরাধীদের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মাদক কারবার ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যৌথ বাহিনীর এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে। পুরো রমজান মাস জুড়ে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে, যাতে টঙ্গীর পরিবেশ স্বাভাবিক রাখা যায়।

তিনি আরও জানান, আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে এবং তাদের টঙ্গী পশ্চিম থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

হাজী মাজার বস্তি শুধু মাদক নয়, বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্যও পরিচিত। স্থানীয়রা জানান, বস্তির অনেক বাসিন্দা টঙ্গী বাজার, স্টেশন রোড, কলেজ গেটসহ আশপাশের এলাকায় ছিনতাই ও ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। বিশেষ করে রাতে পথচারীদের টার্গেট করে মোবাইল, টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

এলাকাবাসীর মতে, মাদকের আস্তানা ভেঙে না ফেললে অপরাধ কমবে না। স্থানীয় দোকানি হাসেম মিয়া বলেন, পুলিশ মাঝে মাঝে ধরপাকড় করলেও কয়েকদিন পর আবার একই পরিস্থিতি হয়। আমরা চাই, প্রশাসন যেন নিয়মিত অভিযান চালায়। তাহলে এলাকাটা নিরাপদ হবে।

টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি ইসকান্দার হাবিবুর রহমান বলেন, যৌথ বাহিনীর এই অভিযান অপরাধ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমরা আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি। যদি কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি আটক হয়ে থাকে, তাহলে তদন্তের মাধ্যমে সেটি নিশ্চিত করা হবে।

অভিযানের পর স্থানীয় বাসিন্দারা প্রশাসনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে তাদের দাবি, এটি যেন একদিনের জন্য সীমাবদ্ধ না থাকে। টঙ্গী যেন মাদক ও সন্ত্রাসের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়, সে লক্ষ্যে নিয়মিত অভিযান চালানোর দাবি জানান তারা।

আপনার মন্তব্য লিখুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
  • © All rights reserved © 2019 alokitoswapner-bd.com - It is illegal to use this website without permission.
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102