বয়সের ভারে নুজ্জ ওরা পায় না কোনো সাহায্য/না খেয়ে কী স্ত্রীসহ উপোস করে মরবো?/ পেটের দায় বাজারে আসি/ক্ষুধার জ্বালা বড় জ্বালা সইতে পারি না।
নারায়ণ সরকার, রূপগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
মহামারী করোনা ভাইরাসে গোটা বিশ্ব আজ অসহায়। প্রচন্ড দাপট নিয়ে দাবড়ে বেড়াচ্ছে করোনা। লন্ডভন্ড অর্থনীতি। বিপর্যস্ত দেশের মানুষ। অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানোর মত মানুষ খোঁজে পাওয়া ভার। সবাই নিজেকে সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছে। কথায় বলে, চাচা আপন প্রাণ বাঁচা। নিজের প্রাণ বাঁচাতেই ব্যস্ত সবাই। নিজের আপন সন্তানই যখন করোনা আক্রান্ত বা মৃতু পিতামাতাকে রেখে চলে যায়। সেখানে অন্যের সাহয্যে কে এগিয়ে আসবে।
নগরপাড়া বাজারের এক কোনে বসে কলা বিক্রি করছেন জাফরুল্লাহ। বয়স হয়েছে। চুল-দাঁড়িতে পাক ধরেছে। ঠিকমত হাঁটতেও পারেন না । এক সময় কর্মঠ থাকলেও এখন শরীরে শক্তি-সামর্থ না থাকায় আগের মত আর কাজ করতে পারেন না। একটা মাত্র ছেলে ছিলো, বিয়ে করার পর সেও আলাদা খায়। উপায় না পেয়ে মানুষের কাছে হাত না পেতে কলা বিক্রি করছেন। তা দিয়ে কোনো মতে চলে তার সংসার। কিন্তু বিপত্তি সেখানেই ‘লকডাউনের’ কারণে মানুষ বাজাওে আসতে পারে না, যেন সবাই অভাবী। এভাবেই নিজের অভাব ও কষ্টের কথাগুলো বলছিলেন বৃদ্ধ জাফরুল্লাহ (৭৫)। করোনায় লকডাউনে বাজাওে আসছেন কেন প্রশ্ন করতেই রেগে গিয়ে বলেন, করোনায় আমগো কি করব? আল্লাই না মারলে করোনায় মারতে পারব না। লকডাউনে ঘওে বসে থাকলে খাওন দিব কেডা। সরকার তো লকডাউন আর শাটডাউন দিয়েই শেষ। ঘওে কি ঝামাই বউ না খেয়ে মরব নাকি?
তিনি আরো জানালেন, একমাস ধরে অসুস্থ ছিলাম। কই কেউ তো কোনো ওষুধপত্র, আধা কেজি চাল এমনকি ২ ডা টাকা দিয়াও তো সাহায্য করল না। তাইলে ঘওে বইয়্যা থাইক্যা কি করমু? এরলে খাইয়্যাই মরমু। কাজ করেই বাঁচমু।
আরেক কর্নারে দেখা মিলল বৃদ্ধ আউয়াল আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, গরীবের আল্লাহ আছে। আমাগো করোনায় ধরব না। চোখে দেখি না ঠিক মত। শরীওে বিভিন্ন অসুখ দানা বেধেছে। তারপরও বেরিয়েছেন রাস্তায়। ঘরে স্ত্রী অপেক্ষা করছেন চাল নিয়ে গেলে হবে রান্না। কিন্তু ‘লকডাউনের’ কারণে বেচাবিক্রি তেমন একটা হয় না। এতে দুঃচিন্তায়, হতাশায় ভুগছেন তিনি।
আব্দুল হাকিম মিয়া এক সময় বাদাম বিক্রি করতেন। কিন্তু বয়স হয়ে যাওয়ায় এখন আর কাজ করতে পারছেন না। চোখেও দেখে না ঠিক মত। অনেক কষ্টেই চলে তার সংসার। সরকারী বেসরকারী কোনো সাহায্য সহযোগীতা পাইলে এ বয়সে এত কষ্ঠ কইরা আর বাজারে আইতাম না। এ দুনিয়ায় সবাই তো নিজেরে লইয়্যাই ব্যস্ত। আমাগো মত গরীবের খোঁজ কেউ লয় না।
আউয়াল আলী বলেন, দীর্ঘ ১ মাস অসুস্থ ছিলাম। ঘরে কোনো খাবার নেই। তাই তো অসুস্থ শরীর নিয়ে বাজারে এসেছি। কিন্তু মানুষ তো বাজাওে তেমন একটা আসে না। এতে বাড়িতে চাল নেওয়ার দুঃচিন্তায় পড়ে গেছি। জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকেও কিছু পাচ্ছি না। তাই তো কষ্টে দিন কাটছে আমাদের। চোখে-মুখে অন্ধকার দেখি, কী করে চলবে। না খেয়ে কী স্ত্রীসহ উপোস করে মরবো?
এ রকম হাজারো জাফুরুল্লা, হাকিম আর আউয়ালরা রূপগঞ্জের আনাচে কানাচে অযতেœ অবহেলায় পড়ে রয়েছে। তাদের দেখার কেউ নেই। সরকারের কত রকম সাহায্যকারী সংস্থা রয়েছে। তারাও এ বিপদের দিনে এ রকম হাজারো দুস্থদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তাই তো তারা বলেন, কাজ করেই খাব। কারো কাছে হাত পাতব না। আমাদের আল্লাহ আছেন। আল্লাহই হেফাজত করবেন।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ নুশরাত জাহান বলেন, গোটা বিশ্ব মহামারী করোনার সংক্রমণ চলছে। এ সময়ে একটু কষ্টতো করতেই হবে। তাছাড়া বৃত্তবানদেও এ সময় সাধ্যমত অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানো অনুরোধ জানান তিনি।