পটুয়াখালী জেলাধীন দুমকী উপজেলায় ‘মুরাদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের প্রশংসা পত্রে ৬০০ টাকা করে ফি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। ১৫ থেকে ২০ টাকা খরচে তৈরি প্রশংসাপত্রের বিপরীতে ৬০০ টাকা আদায় করার অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষাবোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী, সকল শিক্ষার্থীর সনদপত্র ও মার্কসিট (ট্রান্সক্রিপ্ট) এবং প্রশংসা পত্র ফি বোর্ড পরীক্ষার পূর্বে ফরম পূরণের সময়ে আদায় করা হয়। এদিকে দ্বিতীয়বার শিক্ষার্থীদের থেকে টাকা আদায়ের বিষয়টিকে অপরাধ বলছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলেন, “এসএসসি প্রশংসাপত্রের জন্য ফি বাবদ ৬০০ টাকা আদায় করেছেন। এটা জুলুম ও অন্যায়।”
এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধান শুরু করে আলোকিত সপ্নের বাংলাদেশ। অনুসন্ধানে জানা যায়, এসএসসি বোর্ড পরীক্ষার আগে আবেদন ফরম পূরণ করা হয়। সে সময় বোর্ড ফি আদায় করা হয়। বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে দেওয়া এসএসসি-২০২২ সালের ফরম পূরণের তথ্য অনুযায়ী বোর্ড ফি’র মধ্যে মূল সনদ বাবদ ১০০ টাকা এবং ট্রান্সক্রিপ্ট (মার্কশিট) বাবদ ৩৫ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। যা বোর্ড ফি’র সঙ্গে ফরম পূরণের সময়েই আদায় হয়। তবে প্রতিষ্ঠানটিতে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর সার্টিফিকেট ও মার্কশিট এবং প্রশংসা পত্র গ্রহণ করতে পুনরায় ফি আদায় করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক জানান, “প্রশংসাপত্র বাবদ ১৮ থেকে ২০ টাকা সর্বোচ্চ খরচ হয়। যিনি প্রশংসাপত্র তৈরির কাজ করেন তাকে প্রতি প্রশংসাপত্র বাবদ ১১ টাকা করে মজুরি দেওয়া হয়। এছাড়া কাগজ ও কালি বাবদ আরও সাত থেকে ৯ টাকা খরচ হয়। সে হিসেবে এর খরচ দাঁড়ায় ১৮ থেকে ২০ টাকা।”
এসব অনিয়মের কথা জানতে চাইলে মুরাদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর মোহাম্মদ বলেন, “এসএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট (মার্কশিট) ও প্রশংসাপত্র নিতে শিক্ষার্থীদের ফি দিতে হচ্ছে, এটা সত্য। তবে এই ফি আদায়ের নিয়ম অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। এই টাকা প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে জমা হয়। আদায় হওয়া টাকা বিভিন্ন প্রকার ক্ষতি পোষাতে খরচ হয় যেমন এ টাকা দিয়ে সকল শিক্ষককে চিকিৎসা ও বাসস্থান খরচ বাবদ ২০০০ টাকা করে দেয়া হয়।”
তবে অত্র প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক মোঃ জাকির হোসেন সাংবাদিকদের সঙ্গে উত্তেজিত হয়ে বলেন, “আমরা এই টাকা উত্তোলন করে ভাগ করে খাই। আপনাদের যদি কিছু করার থাকে কইরেন। আমরা আপনাদের মতো সাংবাদিক পরোয়া করিনা।”
এদিকে বোর্ড ফি’র পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ফি আদায় করার কোনও নিয়ম নেই বলে জানিয়েছেন দুমকী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বদরুন্নেসা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, “পরীক্ষার আগে বোর্ড ফি’র সঙ্গেই সার্টিফিকেট ও মার্কশিটের এবং প্রশংসা পত্রের টাকা আদায় হয়। এরপরে কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আদায়ের নিয়ম নেই। কারণ বিবিধ ও উন্নয়ন ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের থেকে টাকা আদায় হয়। তাহলে কেন টাকা নেবে প্রতিষ্ঠানগুলো।
এরপরে যদি কেউ ফি আদায় করে সেটা অবৈধ। এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।”