সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:০৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
ময়মনসিংহে পাচারের সময় মানব কঙ্কাল উদ্ধার, গ্রেপ্তার- ২। কোকোর স্মৃতিতে ৮ দলীয় ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত। বাগেরহাটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লটারি পদ্ধতি বাতিলের দাবীতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন। বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর নাম পরিবর্তন। কালিহাতীতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ট্রাকসহ ৬ ডাকাত গ্রেফতার। বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষক প্রয়োজনঃ ড. আবুল কাশেম। বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্তে মেট্রো চালু করবে ভারত। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ৪ স্পটে দুর্ঘটনার কবলে ১০ গাড়ি, নিহত ১, আহত ১৫। নরসিংদীতে ছাত্রদলকর্মীকে গুলি করে হত্যা। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ।

এসিডে শরীর ঝলসে গেলেও দমে যাননি বিপুল।

মোঃ আব্দুল্লাহ আল মারুফ,ঝিনাইদহ প্রতিনিধি।
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৩
এসিডে শরীর ঝলসে গেলেও দমে যাননি বিপুল।
কারখানার মধ্যে নারী-পুরুষ মিলিয়ে অন্য পাঁচজন শ্রমিকের কাজ তিনি বুঝিয়ে দিচ্ছেন। আবার নিজের টিস্যু ব্যাগ তৈরির কারখানায় দাঁড়িয়ে সাদা টিস্যু ব্যাগের ওপর ছাপানোর কাজ করছেন।তিনি এসিড দগ্ধ একজন সফল উদ্যোক্তা এবং কালীগঞ্জের প্রতিষ্ঠিত ব্যাগ ব্যবসায়ী বিপুল হোসেন ঝিনাইদহের সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের পোড়াবাতা গ্রামের ফজলুর রহমান মন্ডল ও ময়না বেগম দম্পতির ছেলে। এসিডে দগ্ধ হওয়ার পর দৃঢ় মনোবল নিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি আজ সমাজে অনুকরণীয় একজন। কৃষক পরিবারের ছেলে বিপুল হোসেন এসএসসি পরীক্ষার পর আর মন বসাতে পারেননি লেখাপড়ায়। তাই ব্যবসা শেখার জন্য গ্রাম থেকে কালিগঞ্জ উপজেলার নিমতলা বাজারের কাপুড়িয়া পট্টির মৃত শওকত হোসেনের কাপড়ের দোকানে সেলসম্যানের কাজ শুরু করেন। সেই সুবাদে দোকান মালিকের বাড়ি পৌর এলাকার হেলাই গ্রামে বিপুল হোসেন রাত্রি যাপন করতেন। এভাবে কেটে যায় তার তিন বছর। হঠাৎ এক রাতে দোকান মালিকের বাড়িতে দুর্বৃত্তের ছোড়া এসিডে ঝলসে যায় বিপুল হোসেনের মাথা, মুখের বাম পাশ, বুক ও দুই হাতের বেশ কিছু অংশ। ‘এসিড সারভারাস ফাউন্ডেশন’ নামের একটি বিদেশি মানবাধিকার সংস্থার মাধ্যমের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রায় চার বছর চিকিৎসা সেবা গ্রহণ শেষে শারীরিকভাবে মোটামুটি সুস্থ হন বিপুল। সংস্থাটি বিপুলকে স্বাবলম্বী হওয়ার পরামর্শ এবং একই সঙ্গে নগদ ৩০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। এসময় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং এসিড দগ্ধ হয় সরকারিভাবে আরও ৩০ হাজার টাকা অনুদান পান বিপুল।  সর্বমোট ৯০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেন বিপুল। প্রবল আত্মবিশ্বাস ও মনোবল নিয়ে ২০০৬ সালে গান্নার নিজ বাড়িতে কাগজের শপিং ব্যাগ তৈরির কাজ শুরু করেন তিনি। প্রাথমিকভাবে নিজে ব্যাগ তৈরি ও বিক্রির কাজ করতেন। কিছুদিন যেতে না যেতেই মার্কেটে ভালো সাড়া পাওয়ায় বিপুলের মনোবল আরও বেড়ে যায়। এ সময় ব্যবসা প্রসারিত করার লক্ষ্যে কালিগঞ্জ শহরের প্রথমে নদীপাড়া এবং পরবর্তীতে হেলাই গ্রামে বসবাস শুরু করে ওই এলাকার গৃহিণীদের দিয়ে ব্যাগ বানানো শুরু করেন। বাসা বাড়ির কাজ সেরে নারীরা কাগজের ব্যাগ তৈরিতে আগ্রহ দেখায়। অনেক নারী প্রতিদিন ১ হাজার পিস ব্যাগ তৈরি কাজ করে মজুরি হিসেবে তিন শত করে টাকা পেতেন। বাজারে চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাগ তৈরির কাজও বেড়ে যায় বহুগুণে। বিপুল বাজারের দোকানগুলো থেকে অর্ডার সংগ্রহ করে দোকানের নাম দিয়ে প্রেস মেশিনে দিয়ে ছাপিয়ে ব্যাগ তৈরি করে তা বাজারজাত করা পর্যন্ত সব কাজ নিজেই তদারকি করতেন। ওই সময় একটি কাগজের শপিং ব্যাগ তৈরি করতে খরচ হতো ২ টাকা। আর বিক্রি হতো প্রতিটি ৩ টাকা। কালীগঞ্জ ও তার আশপাশের কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, জীবননগর, সীমাখালি, আড়পাড়া, খাজুরা ও বিভিন্ন ছোটো খাটো বাজারগুলোতে বিপুলের তৈরি ব্যাগের এক চেটিয়া চাহিদা সৃষ্টি হয়। বিপুল জানান, কালীগঞ্জ শহরের কৃষি অফিস পাড়ায় জমি কিনে দোতলা বাড়ি করেন। নিজের তৈরি বাড়ির নিচতলায় বর্তমানে তার ব্যাগ তৈরির কারখানা রয়েছে। ২০১৪ সালের পর থেকে কাগজের তৈরি শপিং ব্যাগের প্রচলন ধীরে ধীরে একেবারেই কমে যায়, পক্ষান্তরে টিস্যু কাপড়ের তৈরি ব্যাগের প্রচলন শুরু হয়। যে কারণে এখন ঢাকার ম্যাটাডর ও আরএফএল কোম্পানির বিভিন্ন সাইজের টিস্যু ব্যাগ কিনে এনে নিজের কারখানায় ছাপিয়ে তা বাজারজাত করছেন তিনি। বর্তমানের টিস্যু ব্যাগ তৈরির ব্যবসায় বিপুলের ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার মতো পুঁজি খাটলেও আগের মত লাভ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ের পর থেকে ব্যাগ তৈরির ব্যবসার এই দুরবস্থা বিরাজমান। তবুও থেমে যাননি তিনি। তিনি আরও জানান, বর্তমানে তার ব্যাগ তৈরির কারখানায় ৫ কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। সব খরচ-খরচা বাদ দিয়ে প্রতি মাসে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা থাকে তার। বিপুল হোসেনের ব্যাগ তৈরির কারখানায় কাজ করেন চাপালী গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শাহিন হোসেন। তিনি জানান, ভাইয়ের ব্যাগ তৈরির কারখানায় কাজ করে তার সংসার চলে। পরিবার-পরিজন নিয়ে দুবেলা দুমুঠো খেয়ে পরে ভালই যাচ্ছে দিন তার। একই কারখানায় কাজ করেন কাদিরকোল গ্রামের লক্ষীরানী। তিনি বলেন, বিপুল দাদার কারখানায় আমি কাজ করি। সারাদিন কাজ করে যা পাই, তা দিয়ে আমার স্বামীর সংসারে অনেক সহযোগিতা হয়। কালীগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মনির গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী মনির হোসেন বলেন, আমার দোকানের যত শপিংব্যাগ লাগে, আমি বিপুল ভাইয়ের কাছ থেকেই সব নিই। এসিড দগ্ধ একজন মানুষ এত পরিশ্রম করতে পারে তাকে না দেখলে বোঝা যাবে না। এসিড দগ্ধ বিপুল হোসেন নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, কালিগঞ্জ বাজারে এসেছিলাম কাপড়ের ব্যবসা শেখার জন্য, অথচ আজ আমি একজন ব্যাগ ব্যাবসায়ী। এসিডে নিজের শরীর দগ্ধ হওয়ার পর জীবনের মোড় ঘুরে গেছে আমার। প্রবল ইচ্ছা শক্তি ও মনোবল আমাকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি চেষ্টা করেছি আর তার উত্তম প্রতিদানও আল্লাহর ইচ্ছায় আমি পেয়েছি। কালিগঞ্জ পৌর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আসাদুজ্জামান বলেন, ব্যাগ ব্যবসায়ী এসিড দগ্ধ বিপুলকে দেখে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। অত্যন্ত পরিশ্রমী তিনি।  চেষ্টা করেছে বলেই তিনি আজ সফল হয়েছে।
আপনার মন্তব্য লিখুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
  • © All rights reserved © 2019 alokitoswapner-bd.com - It is illegal to use this website without permission.
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102