শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:০১ পূর্বাহ্ন

প্রথমবার মঙ্গলে বজ্রপাতের শব্দ রেকর্ড করল নাসা

আলোকিত স্বপ্নের বিডি
  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৫

লাল গ্রহের ধুলোঝড়ে বিদ্যুতের ঝলকানি আর ছোট স্পার্কের শব্দ রেকর্ড করল নাসার রোভার। প্রথমবারের মতো মঙ্গলে এই বৈদ্যুতিক খেলা ভবিষ্যতে মানুষের অভিযানে নতুন দিক নির্দেশ করবে।

এমন ঘটনা মাত্র একবার নয়, গত দুই বছরে অন্তত ৫৫ বার ঘটে থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তবে মঙ্গলের বজ্রপাত পৃথিবীর মতো নয়—এটি তুলনামূলকভাবে খুবই ক্ষীণ ও সূক্ষ্ম।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলে বজ্রপাত মূলত ধুলোঝড়ের কারণে ঘটে। লাল গ্রহে যখন বিশাল ধুলোঝড় বা ছোট ছোট ঘূর্ণিবাতাস সৃষ্টি হয়, তখন ধুলোর কণাগুলো একে অপরের সঙ্গে প্রচণ্ড ঘষা খায়। এই ঘর্ষণের ফলে সেখানে স্থির তড়িৎ বা স্ট্যাটিক চার্জ তৈরি হয়। ঠিক যেমন পৃথিবীর আগ্নেয়গিরির ছাইয়ে বিদ্যুতের চমক দেখা যায়, তেমনি মঙ্গলের ধুলোঝড়েও ছোট ছোট বিদ্যুৎ স্ফুলিঙ্গ তৈরি হয়।এতদিন শুধু অনুমান ছিল, কিন্তু এবার পারসিভিয়ারেন্স রোভার সেই অনুমানের সরাসরি প্রমাণ হাতে পেয়েছে। রোভারটির সুপারক্যাম মাইক্রোফোন প্রায় ২৮ ঘণ্টার অডিও রেকর্ড বিশ্লেষণ করেছে। ফ্রান্সের ইউনিভার্সিটি অব এইজ-মার্শেই এবং লস আলামস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির গবেষক বাপটিস্ট চাইড ও তার দল এই রেকর্ড পরীক্ষা করেছেন।

রেকর্ড বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রথমে মাইক্রোফোনে একটি হালকা যান্ত্রিক ব্লিপ শব্দ শোনা যায়, যা বিদ্যুতের কারণে তৈরি চৌম্বকীয় সংকেত। এর ঠিক পরপরই শোনা যায় ক্ষীণ একটা গর্জনের মতো শব্দ, যেন একটি ছোট মেঘ বিদ্যুতের আঘাত পাচ্ছে। বাতাসের মধ্যে বিদ্যুতের চলাচল হলে বাতাস হালকা গরম হয়ে প্রসারিত হয় এবং তখনই এই শব্দ তৈরি হয়।

মোট ৫৫টি রেকর্ডের মধ্যে ৭টিতে এই ধরনের শব্দ এবং সংকেত স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে। বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হওয়ার জন্য পৃথিবীর পরিবেশে একই ধরনের যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করেছেন। ফলাফল নিশ্চিত করেছে—এটি সত্যিই মঙ্গলের বজ্রপাতের শব্দ।পৃথিবীর বজ্রপাতের শক্তি প্রায় ১০০ কোটি জুলের কাছাকাছি হতে পারে। কিন্তু মঙ্গলের বজ্রপাত অনেক দুর্বল; সাধারণত মাত্র কয়েক ন্যানোজুল থেকে মিলিজুল শক্তির। এটি কোনো ভয়ংকর বজ্রপাত নয়, বরং ছোট স্পার্ক বা স্ফুলিঙ্গের মতো। তবে রোভারটির কাছে একটি ঘটনা তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী ছিল—প্রায় ৪০ মিলিজুল শক্তি, যা হয়তো রোভারের কাছাকাছি ধুলো ওড়ার কারণে রোভারের শরীরের মাধ্যমে মাটিতে ডিসচার্জ হয়েছে।

ছোট হলেও এই আবিষ্কার মঙ্গলের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে মানুষ বা উন্নত রোবট যখন মঙ্গলে যাবে, তখন ধুলোঝড়ে তৈরি বৈদ্যুতিক চার্জ যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে এই বিদ্যুতের কারণে কোন ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে তা বোঝা সম্ভব হবে।

নেচার জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা মঙ্গলের আবহাওয়ার নতুন দিক উন্মোচন করেছে। গবেষকরা বলছেন, লাল গ্রহটি নিস্তেজ বা মৃত নয়; ধুলোঝড়ে সেখানে আগুনের স্ফুলিঙ্গ ও বিদ্যুতের খেলা চলছে। এটি মঙ্গলের সক্রিয় আবহাওয়ার প্রমাণ হিসেবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার মন্তব্য লিখুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
  • © All rights reserved © 2019 alokitoswapner-bd.com - It is illegal to use this website without permission.
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102