ক্যারিবীয় অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান মার্কিন সামরিক উপস্থিতির মধ্যে ভেনেজুয়েলায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের বিকল্প নিয়ে আলোচনা করতে ট্রাম্প প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে তিনটি বৈঠক করেছেন। শনিবার (১৫ নভেম্বর) কর্মকর্তাদের বরাতে রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
ভেনেজুয়েলার উপকূলে নৌকাগুলোতে দুই মাস ধরে ভয়াবহ হামলা চালিয়ে যাচ্ছে মার্কিন বাহিনী। সামরিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই অঞ্চলে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ এবং একটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন করেছেন।
এই সপ্তাহের শুরুতে বিমানবাহী রণতরী ‘জেরাল্ড ফোর্ড’ স্ট্রাইক গ্রুপ ল্যাটিন আমেরিকা অঞ্চলে প্রবেশ করেছে বলেও জানা গেছে। তাদের সঙ্গে ৭৫টিরও বেশি সামরিক বিমান এবং ৫ হাজারেরও বেশি সৈন্য রয়েছে।গতকাল শুক্রবার ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে শিগিগিরই সিদ্ধান্ত আসতে পারে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট তথাকথিত ‘অবৈধ মাদক ব্যবসার’ সঙ্গে ভেনেজুয়েলার শাসকদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের অভিযোগ করেছেন।ট্রাম্প এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আপনাকে বলতে পারছি না এটা কী হবে, তবে ভেনেজুয়েলার ব্যাপারে আমি আমার মন স্থির করে ফেলেছি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চারজন মার্কিন কর্মকর্তা এবং বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছেন, গত সপ্তাহে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনজন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, এর মধ্যে একটি সভা শুক্রবার ছিল।এই কাউন্সিলটি হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ দেয়। একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বুধবার একটি ছোট দল বৈঠক করেছে। এরপর বৃহস্পতিবার আরও একটি বৃহত্তর বৈঠক হয় – যেখানে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, মিলার, প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ এবং জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, এ বিষয়ে হোয়াইট হাউস তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধের জবাব দেয়নি।বিষয়টি সম্পর্কে অবগত একটি সূত্র জানিয়েছে, ট্রাম্প গত বৃহস্পতিবার সিচুয়েশন রুমে এক বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে তাকে ‘বেশ কয়েকটি বিকল্প’ সম্পর্কে অবহিত করা হয়।কোন বিকল্পগুলো ট্রাম্পের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছিল, রয়টার্স তা নির্ধারণ করতে পারেনি। তবে ট্রাম্প এর আগে ভেনেজুয়েলায় স্থল আক্রমণের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন।
তিনি বারবার বলেছেন, ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন না।
তবে ২০১৩ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো বলেছেন, ট্রাম্প তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে চাইছেন।
আগস্ট মাসে ওয়াশিংটন মাদুরোকে ‘ধরিয়ে দেওয়ার জন্য’ তথ্য দিলে ৫০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে। তার বিরুদ্ধে মাদক পাচার এবং অপরাধমূলক গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ করা হয়। তবে মাদুরো এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।এখন পর্যন্ত ক্যারিবীয় এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন সামরিক বাহিনী তথাকথিত ‘মাদকবাহী’ জাহাজের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ২০টি হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত ৮০ জন নিহত হয়েছে।
জাতিসংঘ এবং আইন বিশেষজ্ঞরা এসব আক্রমণের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কিছু ইউরোপীয় মিত্র এসব অভিযানের সমালোচনা করেছেন। তারা সতর্ক করে দিয়েছেন, ওইসব নৌকায় মাদক বহনের কোনো প্রমাণ দেওয়া হয়নি। এই হত্যাগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে গণ্য হতে পারে।