শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৪০ পূর্বাহ্ন

কপোতাক্ষ নদের ভাঙ্গনকবলিত এলাকায় অবৈধ বালু উত্তোলন: হুমকির মুখে বেড়িবাঁধ ও শত শত পরিবার

মিনহাজ দিপু, কয়রা প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫
খুলনার কয়রা উপজেলা সদরের কপোতাক্ষ নদের গোবরা, ঘাটাখালি, হরিণখোলা ও ২নং কয়রা গ্রামের ভাঙ্গনকবলিত স্থান থেকে প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এর ফলে হুমকির মুখে পড়েছে বেড়িবাঁধসহ হাজার হাজার ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও শত শত একর ফসলি জমি।
এই অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে ১৩ অক্টোবর (সোমবার) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত হরিণখোলা বেড়িবাঁধ এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন স্থানীয় শত শত নারী-পুরুষ। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, ইউপি সদস্য শেখ আবুল কালাম, জামায়াত নেতা মাওলানা আব্দুল হাই, শেখ রাশেদ, শেখ কেরামত আলী, আবু হানিফাসহ অনেকে।
মানববন্ধনে বক্তাদের অভিযোগ
বক্তারা জানান, উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের হাজতখালী কাঠমারচর হয়ে কয়রা সদর ইউনিয়নের ২নং কয়রা, হরিণখোলা, ঘাটাখালি ও গোবরা পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সংস্কার ও ডাম্পিং কাজ চলমান। সেখানে বালু ভর্তি বস্তা প্লেসিংয়ের কাজ করছেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। অথচ ওই বাঁধের পাশ ঘেঁষে প্রতিদিন রাতে ৭-৮টি কার্গো ড্রেজারের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে সাব-ঠিকাদারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়রা গ্রামের কথিত বালুখেকো ইছা ঢালী ও মদিনাবাদ গ্রামের হারুন।
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—বাঁধের পাড় ঘেঁষে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর নিচে গভীরতা বাড়ছে এবং সেখান থেকেই নতুন ভাঙন সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সরকারি কোটি কোটি টাকার সংস্কার প্রকল্প হুমকির মুখে পড়েছে। বক্তারা বলেন, “একদিকে সরকার ভাঙনরোধে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে, অন্যদিকে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে সেই টাকাই পানিতে যাচ্ছে।”
স্থানীয়দের ভাষ্য, এর আগেও কয়েকবার ঘাটাখালি, হরিণখোলা ও ২নং কয়রা এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে উপজেলা সদরসহ অন্তত ২০-২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল। এতে কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়।
ইউপি সদস্য শেখ আবুল কালাম বলেন, আমাদের হরিণখোলা-ঘাটাখালি গ্রামে প্রায় সাত শতাধিক পরিবার ছিল। গত ১০-১৫ বছরে নদীভাঙনে প্রায় চার শতাধিক পরিবার বসতবাড়ি ও জমি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছেন। এখনো অবৈধ বালু উত্তোলন চলতে থাকলে অবশিষ্ট পরিবারও ভিটেমাটি হারাবে।”
তিনি আরও বলেন,বিষয়টি আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বারবার জানিয়েছি। সম্প্রতি ইউএনও অভিযান চালিয়ে ড্রেজারসহ দুইজনকে আটক করে এক লাখ টাকা জরিমানা করেন। কিন্তু পরদিনই আবার বালু উত্তোলন শুরু হয়। প্রতিদিন প্রায় ১০  লাখ টাকার বালু যাচ্ছে, এক লাখ টাকা জরিমানা দিয়ে ওরা থামবে কেন?”বরং আরো উৎসাহিত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১০-১৫ বছর ধরে হারুন নামের এই ব্যক্তি শুধু কপোতাক্ষ নয়, সুন্দরবনসংলগ্ন সাকবাড়িয়া নদীসহ আশপাশের খাল-নদী থেকেও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছেন। প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে বছরের পর বছর ধরে ব্যবসা চালিয়ে গেলেও তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। মাঝে মাঝে লোক দেখানো জরিমানা ও মুচলেকা নিলেও তার কার্যক্রম বন্ধ হয়নি।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে সরকার একদিকে রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে প্রতিবছর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংস্কারের নামে হাজার হাজার কোটি টাকার অপচয় হচ্ছে। তারা দ্রুত বালু উত্তোলন বন্ধ ও জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি করেন।
আপনার মন্তব্য লিখুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
  • © All rights reserved © 2019 alokitoswapner-bd.com - It is illegal to use this website without permission.
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102