শরিফা বেগম শিউলী রংপুর প্রতিনিধিঃরংপুর-৬, (পীরগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, বর্তমান পীরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মন্ডল (নুরু মন্ডল) বিরুদ্ধে জ্ঞ্যত আয় বহির্ভুত সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করেছেন রংপুর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার বিকেলে দুদকের উপ-সহকারি পরিচালক নুর আলম রংপুর জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) এই মামলা করেন। জেলা দুর্নীতি কমিশনের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, রংপুর-৬, (পীরগঞ্জ) আসনের ২ বারের জাপা সংসদ সদস্য ও ২ বারের (বর্তমান) উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা নুর মোহাম্মদ মন্ডল। তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের জারিকৃত সম্পদ বিবরণী তথ্যে তার (নুরু মন্ডল) স্থাবর সম্পদের পরিমান ৫ কোটি ২২ লাখ ৫৬ হাজার ১৬৮ টাকা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধানে তার সম্পদের পরিমান পাওয়া যায় ৮ কোটি ৯৮ লাখ ৮৮ হাজার ৮০২ টাকা।
তিনি ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৩৩ হাজার ৬৩৪ টাকার স্থাবর সম্পদের তথ্য গোপন করেন। উক্ত সম্পদ তার জ্ঞাত আয়ের বহির্ভুত উৎস হিসেবে তিনি ভোগ করছেন। তার অস্থাবর সম্পদের বিবরনীতে ২৯ লাখ ৮ হাজার ২১৭ টাকা দাখিল করেছেন। তিনি সম্পদ বিবরনীতে দায় দেনার চেয়ে ১ কোটি ৩১ লাখ ৬৪ হাজার ২১৮ টাকা দেখিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে উক্ত টাকাও তিনি জ্ঞাত আয় বহির্ভত ভাবে ভোগ দখল করছেন।
এজাহারে বলা হয়, পৌনে ৪ কোটির বেশি টাকা ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে নুরু মন্ডল সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালিন সময়ে আয় করেছে। কমিশনের অনুমোদনক্রমে তার বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী নোটিশ ২০১৯ সালের ১২ মে জারি করা হয়। ওই বছরের ১৩ মে তিনি নোটিশ গ্রহণ করেন এবং ৩০ মে তার সম্পদের বিবরনী দাখিল করেন। দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে নুর মোহাম্মদ মন্ডল ৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকার বেশি জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পদ ভোগ দখল করছেন। এ কারণে দুর্নীতি দমন কমিশনের ২০০৪ এর ২৬(২) ২৭(১) ধারা ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২০১২ এর ৪(২)(৩) ধারামতে মামলা করা হয়েছে।
দুদকের রংপুর জেলা উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কমিশনের অনুমোদনক্রমে নুর মোহাম্মদ মন্ডলের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পদ অর্জন ও মানিলন্ডারিং আইনে মামলা হয়েছে। মামলার পরবর্তি কার্যক্রমের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
উল্লেখ, নুরু মন্ডল ১৯৯৫ সালে বিএনপি থেকে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করে ১৯৯৬ সালে জাপার মনোনয়ন নিয়ে আ’লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাসুর অধ্যাপক আব্দুল ওয়াহেদ কানু মিয়াকে পরাজিত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পরাজিত করে আবারো জাপার ব্যানারে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এরপর তিনি জাতীয় পার্টি থেকে বিএনপিতে ফিরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাসুর পুত্র একেএম ছায়াদতহোসেন বকুলকে পরাজিত করে উপজেলা চেয়ারম্যান হন। এরপর বিএনপি ত্যাগ করে তিনি উপজেলা আ’লীগে যোগদান করে নৌকা প্রতীকে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে উপজেলা আ’লীগের নবনির্বাচিত কমিটিতে তিনি সদস্য আছেন।