মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১৩ অপরাহ্ন

ঘুমন্ত যুবককে বাড়ি থেকে ডেকে হত্যা মামলার বাদীর সন্তানদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য

আলোকিত স্বপ্নের বিডি
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
ছবি : সংগৃহীত

ঝিনাইদহের ঘুমন্ত যুবককে বাড়ি থেকে ডেকে হত্যা মামলার বাদীর সন্তানদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী।

রোবাবার (৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে শহরের বেদেপল্লীর প্রায় ২ শতাধিক নারী-পুরুষ থানায় অবস্থান নিয়ে এক ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভকারীরা ওসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলেও দেখা পাননি। এরপর তারা শহরের নিমতলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা যশোর-ঝিনাইদহ সড়ক অবরোধ করেন। পরে তিনদিনের মধ্যে ওসির অপসারণের আল্টিমেটাম দিয়ে মহাসড়ক থেকে সরে যান তারা।

বাদীর অভিযোগ, মামলা থেকে হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ডকে বাদ দিয়েছেন ওসি শহিদুল ইসলাম হাওলাদার। কৌশলে সাদা কাগজে বাদীর সই নিয়ে রেখেছেন তিনি। এমনকি হত্যার শিকার যুবকের স্ত্রী ওসির কাছে মূল আসামি বাদ পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। ওই নারীকে ওসি বলেন, ‘তোমার তিন সন্তান নিহত আবু তালেবের পক্ষের না। এসব সন্তান অন্য কোথাও থেকে নিয়ে এসেছো।’ ওসির এমন বিতর্কিত মন্তব্য প্রকাশ্যে এলে ক্ষোভে ফুঁসে উঠে এলাকাবাসী। গ্রামের কয়েকশ মানুষ কালীগঞ্জ থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন। এসময় সড়ক অবরোধ করে ওসি শহিদুল ইসলাম হাওলাদারের অপসারণের দাবিতে স্লোগান দেন তারা।

জানা গেছে, গত ৩ এপ্রিল ভোররাতে পূর্ব শত্রুতার জেরে ধরে আবু তালেব নামে এক যুবককে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে লোহার রড দিয়ে হত্যা করা হয়। ওই দিনই নিহতের ভাই আব্দুল আলীমকে থানায় ডেকে মামলার বাদী করানো হয়। কিন্তু এজাহারে কী লেখা আছে সেটি তিনি কিছুই জানেন না বলে অভিযোগ করেন। মামলায় রুবেল হোসেন নামে একজনকে আসামি করা হয়েছে। যাকে ওইদিনই গ্রেফতার করা হয়।

নিহতের ভাই ও মামলার বাদী মোহাম্মদ আব্দুল আলীম বলেন, ঘটনার দিন আমরা থানায় যাই। একপর্যায়ে থানার ওসি আমাদের সবাইকে বের করে দেন। পরে বাড়ি থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়ে একটি মামলা নথিভুক্ত করেন। কিন্তু এজাহারে কী লেখা সেটি আমরা জানি না। ওসি নিজের মতো এজাহারে একজনকে আসামি করেছেন। কিন্তু হত্যার মাস্টারমাইন্ড সেলিম নামে একজন। সে একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মাদক মামলাও রয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড সেলিমকে ওসি মামলা থেকে বাদ দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, কালীগঞ্জ থানার অনেক পুলিশ সদস্য বেদেপল্লীতে গিয়ে সেলিমের সঙ্গে বসে নিয়মিত আড্ডা ও মাসোয়ারা নেন। আমরা দ্রুত এই ওসির অপসারণ চাই। এই ওসি অপসারণ না হলে আমার ভাই হত্যার বিচার পাবো না।

বাদীর সন্তানদের নিয়ে ওসির আপত্তিকর মন্তব্য, থানা ঘেরাও

নিহত আবু তালেবের স্ত্রী জানেদা বেগম বলেন, আমার তিনটা সন্তান। কিন্তু ওসি বলেছে এই সন্তান নাকি আবু তালেবের পক্ষের না। তুই অন্য কোন স্থান থেকে এনেছিস। ওসি কিভাবে জানলো এই সন্তান আবু তালেবের না। আমি এখন এই তিনটা সন্তান নিয়ে কোথায় যাবো? ওসি টাকার বিনিময়ে সেলিমের নাম বাদ দিয়েছে। এই ওসিকে কালীগঞ্জে চাই না।

এ বিষয়ে জানতে কালীগঞ্জ থানার ওসি শহিদুল ইসলাম হাওলাদারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

কালীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোফাজ্জেল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় মামলার পর একজন আসামি গ্রেফতার হয়েছেন। বাদীপক্ষ এখন নতুন করে আরও আসামি অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছে। এই দাবি নিয়ে থানায় এসে তারা বিশৃংখলা করেছেন।

এদিকে ওসি শহিদুল ইসলামের আপত্তিকর মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের মন্তব্য করার কোনো ঘটনা ঘটেনি। ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য অপচেষ্টা হচ্ছে।

এসব বিষয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া মুঠোফোনে বলেন, কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজে নড়াইলে আছি। কালীগঞ্জ থানায় আজ কি ঘটনা ঘটেছে, তা আমার জানা নেই। ঘটনার বিস্তারিত জেনে তারপর জানাতে পারব।

জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনজুর মোরশেদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি।

আপনার মন্তব্য লিখুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
  • © All rights reserved © 2019 alokitoswapner-bd.com - It is illegal to use this website without permission.
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102