পুনম শাহরীয়ার ঋতু,ঢাকা:বাবা রায়হান মোল্লাহ শখ করে বিশ হাজার টাকা দিয়ে একটি দামি এন্ডুয়েট অপু সেট ক্রয় করেন। কিন্তু ছেলে আরিয়ান মোল্লাহর বায়না সেই মোবাইল সেট দিয়ে গেমস খেলবে। ছেলের আবদারে বাবা রায়হান মোল্লাহ নিজের ব্যবহৃত মোবাইলটি হাতে দিয়ে স্থানীয় একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজে চলে যান।
বাবার পিছনে ছেলে আরিয়ান মোল্লাহ হাতে মোবাইল ফোনটি নিয়ে বাড়ীর বাহিরে এসে বাবাকে টা টা জানায়। রায়হানের হাতে সময় না থাকায় পিছনে না ফিরে কর্মস্থলে চলে যান রায়হান। দুপুর গড়িয়ে পড়লেও বাড়ী থেকে বের হয়ে আসা আরিয়ান মোল্লাহ (৯) বাসায় না যাওয়ায় মা আনিকা বেগম বাড়ির বাহিওে এসে খোঁজতে থাকেন। খবর চলে যায় রায়হান মোল্লার কর্মস্থলে। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ীতে এসে দেখেন বাড়ী ভর্তি গ্রামবাসী ভীড় করছেন। অবশেষে নিখোঁজের ২৭ ঘন্টা পর শিশুর লাশ মিললো স্পিনিং মিলের পুকুরের পানিতে।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ইউনিয়নের ভান্নারা পশ্চিম পাড়া গ্রামে নিখোঁজের ২৭ ঘন্টা পর রোববার বিকেলে শিশু আরিয়ান মোল্লাহর লাশ মিলে বাড়ীর পাশে একটি স্পিনিং মিলের পুকুরে। পুলিশ নিহত আরিয়ান মোল্লাহর লাশ উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন।
পুলিশ, এলাকাবাসী ও নিহত শিশুর পরিবারের সদস্যরা জানান, স্থানীয় একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক রায়হান মোল্লাহ দীর্ঘ দশ বছরে আগে মানিকগঞ্জ থেকে নদী ভাঙ্গা পড়ে ভান্নারা পশ্চিম পাড়া এলাকায় এসে একখন্ড জমি কিনে বসবাস শুরু করেন। পরিবারে স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়েই সুখেই দিন কাটছিলো পোশাক শ্রমিক রায়হানের। অনেক শখ করে রায়হান মোল্লাহ বিশ হাজার টাকা দিয়ে একটি অপু ব্যান্ডের মোবাইল সেট কিনেন।
গত কয়েক দিন ধরে ভান্নারা আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে আরিয়ান মোল্লাহ রায়না ধরে, ওই মোবাইল সেট দিয়ে গেমস খেলবে। তাই কয়েকদিন ধরেই সেই মোবাইল সেট ছেলের হাতে দিয়ে অফিসে চলে যান রায়হান মোল্লাহ। গত শনিবার সেই একই নিয়মে ছেলের হাতে মোবাইল সেট দিয়ে দুপুরের খাবার শেষ করে চলে যান অফিসে। ছেলে রায়হান মোল্লাহ পিছনে পিছনে এসে বাবাকে টা টা দিতে দিতে বাড়ির বাইরে চলে আসে।গতকাল শনিবার দুপুরের পর শিশু আরিয়ান মোল্লাহকে খুঁজে না পেয়ে বিকেল থেকে আশপাশের বাড়ীঘর, বন জঙ্গলে খোঁজে না পেয়ে সন্ধ্যায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন রায়হান মোল্লাহ। গভীর রাত পর্যন্ত নিখোঁজ হওয়ার খবরটি আশপাশের এলাকায় মাইকিং করাও হয়।
রোবরাব বিকেলে পার্শ্ববর্তী হাজী ইসমাইল স্পিনিং মিলের পশ্চিম পাশে আকবর আলীসহ ৪-৫জন বর্শি দিয়ে মাছ ধরতে যান। পুকুরের পাশে যাওয়ার পর পরই শিশুর কালো চুল পানিতে ভাসতে দেখেন। পরে আকবর আলীসহ সংগীরা স্থানীয় ইউপি সদস্য তমিজ উদ্দিনকে ফোনে জানান।
এখবর আশপাশে ছড়িয়ে পড়লে শত শত লোক পুকুরের পাড়ে এসে ভীড় জমায়। খবর পেয়ে মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ীর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করেন।
নিহত আরিয়ান মোল্লাহর বাবা রায়হান মোল্লাহ জানান, আমার কোন শত্রু ছিলো না। তবে আমার ছেলেকে কেন হত্যা করলো। মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ীর ইনচার্জ ওসি মনির হোসন জানান, এ শিশু নিহতের ঘটনাটি দামি মোবাইল সেটের কারণে হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। তবে নিহতের শরীরে আঘাতের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। পুকুরের মাছে ঠুকরিয়ে আঘাত করার চিহ্ন রয়েছে।