মেটার সুপারইন্টেলিজেন্স ল্যাবের প্রধান বিজ্ঞানী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন জনপ্রিয় এআই চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি’র সহ-নির্মাতা শেংইয়া ঝাও। তাঁর মেটায় যোগ দেওয়ার বিষয়টি শুক্রবার (২৫ জুলাই) ঘোষণা করেছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক জাকারবার্গ।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তিতে নিজেদের অগ্রগতি আরও ত্বরান্বিত করতে মেটার নেওয়া সাম্প্রতিক বিস্তৃত উদ্যোগের অংশ হিসেবেই এবার সুপারইন্টেলিজেন্স টিমের ‘চিফ সায়েন্টিস্ট’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে শেংইয়া ঝাও-কে।
উল্লেখ্য, এআই প্রযুক্তির পরিচিত মুখ শেংইয়া ঝাও এর আগে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন শীর্ষ এআই প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই-তে, যেখানে তিনি জেনারেটিভ এআইভিত্তিক চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি’র নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
মেটায় শেংইয়া ঝাও সুনির্দিষ্টভাবে কোন দায়িত্বটি পালন করবেন সে সম্পর্কেও জানিয়েছেন মার্ক জাকারবার্গ। শুক্রবার মেটার মালিকানাধীন সোশ্যাল মিডিয়া থ্রেডসে শেয়ার করা পোস্টে জাকারবার্গ লিখেছেন, ‘(চিফ সায়েন্টিস্টের) ভূমিকায় শেংজিয়া আমাদের নতুন ল্যাবের গবেষণার বিষয়সমূহ নির্ধারণ করবেন এবং বৈজ্ঞানিক দিকনির্দেশনা প্রদান করবেন…।’
থ্রেডসের পোস্টে তিনি আরও জানিয়েছেন যে, মেটার নতুন সুপারইন্টেলিজেন্স ল্যাবটি তাঁর এবং অ্যালেক্স ওয়াংয়ের সাথে সরাসরি কাজ করে থাকে। উল্লেখ্য, অ্যালেক্স ওয়াং হচ্ছেন মেটার প্রধান এআই অফিসার যিনি সুপারইন্টেলিজেন্স ল্যাবের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
সম্প্রতি জাকারবার্গের মেটা বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করেছে অ্যালেক্স ওয়াংয়ের প্রতিষ্ঠিত এআই ডেটা লেবেলিং স্টার্টআপ ‘স্কেল এআই’-তে। চুক্তির অংশ হিসেবেই মেটার সুপারইন্টেলিজেন্স ল্যাবের প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন তিনি।
গবেষক ও বিজ্ঞানী হিসেবে ওপেনএআই-তে কর্মরত অবস্থায় শেংইয়া ঝাও বেশ কিছু মডেল ও টুল তৈরিতে অবদান রেখেছেন যেগুলো পরবর্তীতে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠে। চ্যাটজিপিটি ও জিপিটি-৪ এর পাশাপাশি ওপেনএআই’র বেশ কিছু মিনি এআই মডেল- যেমন ৪.১ এবং ০৩ (ওথ্রি)- তৈরিতে সহ-নির্মাতা হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।
উল্লেখ্য, এআই খাতে মেটার অবস্থান আরও সুসংহত করতে প্রায় ৫০ জনের একটি সুপারইন্টেলিজেন্স টিম তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন জাকারবার্গ। এআই খাতে বিশ্বের সবচেয়ে দক্ষ ও সেরা গবেষক ও বিজ্ঞানীদের একত্রিত করে সুপারইন্টেলিজেন্স টিম গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছেন জাকারবার্গ। এই টিমে নিয়োগ দেওয়ার দায়িত্বটিও নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন তিনি।
স্যাম অল্টম্যানের প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই থেকে শীর্ষ এআই গবেষকদের বেশ কয়েকজন ইতোমধ্যেই যোগ দিয়েছেন মেটা’র সুপারইন্টেলিজেন্স ল্যাবে। গত মাসের (জুনের) শেষ দিকে মেটায় যোগ দিয়েছেন ওপেনএআই’র শীর্ষ তিন এআই গবেষক- লুকাস বেয়ার, আলেক্সানডার কোলেসনিকভ ও শাহুয়া জাই। সে দলে এবার যোগ দিলেন শেংইয়া ঝাও।
সাম্প্রতিক সময়ে মেটা’র লামা ৪ এআই মডেলটি আশানুরূপ সাফল্য পেতে ব্যর্থ হওয়ার পর হতাশ জাকারবার্গ সিদ্ধান্ত নেন, মেটার এআই পরিকল্পনাকে তিনি ঢেলে সাজাবেন। আর সে কারণেই তিনি সুপারইন্টেলিজেন্স ল্যাব তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন। এআই খাতের শীর্ষ গবেষকদের আকৃষ্ট করতে সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্যাকেজও অফার করছেন মেটা প্রধান।
পাশাপাশি এআই খাতের সম্ভাবনাময় স্টার্টআপগুলোর সাথেও চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে মেটা, যাতে করে তাঁদের উন্নত প্রযুক্তি অ্যাক্সেস করা যায় এবং শীর্ষ গবেষকদের মেটায় কাজ করতে আকৃষ্ট করা যায়। উল্লেখ্য, সুপারইন্টেলিজেন্স ল্যাব তৈরির পেছনে মেটার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে লামা এআই মডেলগুলোকে একত্রিত করে আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স-কেন্দ্রিক নিজেদের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা।
থ্রেডসে শেয়ার করা পোস্টে শেংইয়া ঝাও-কে সুপারইন্টেলিজেন্স ল্যাবের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মেটা’র এআই রিসার্চ ডিভিশন ‘ফেয়ার’-এর অধীনে পরিচালিত না হয়ে সুপারইন্টেলিজেন্স ল্যাবটি স্বতন্ত্রভাবে পরিচালিত হয়। উল্লেখ্য, ‘ফেয়ার’-এর নেতৃত্বে আছেন ডিপ লার্নিং প্রযুক্তির পথিকৃত ইয়ান লাকুন।
জাকারবার্গ বলেছেন যে, মেটার লক্ষ্য হচ্ছে ‘ফুল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স’ অর্জন করা এবং প্রযুক্তিটিকে ওপেন সোর্স হিসেবে সকলের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া। তাঁর এই কৌশল বিশ্বব্যাপী এআই কমিউনিটি-তে একই সাথে সমালোচিত যেমন হয়েছে তেমনি হয়েছে প্রশংসিতও।