মধ্যপ্রাচ্য বহুদিন ধরেই সংঘাত ও উত্তেজনার আবাসস্থল। তবে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ও আশঙ্কাজনক দ্বন্দ্বের নাম — ইসরায়েল বনাম ইরান যুদ্ধ। এটি শুধু দুটি দেশের দ্বন্দ্ব নয়; বরং এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে গোটা মুসলিম বিশ্ব, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা পরিমণ্ডলে।
ইসরায়েল ও ইরান মূলত আদর্শিক, কৌশলগত ও সামরিক প্রতিপক্ষ। ইরান সবসময় ফিলিস্তিনের পক্ষে এবং ইসরায়েলের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে আসছে। অপরদিকে, ইসরায়েল ইরানকে সবচেয়ে বড় হুমকি মনে করে, বিশেষত ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ঘিরে। ইরান যেমন লেবাননের হিজবুল্লাহ ও গাজার হামাসকে সমর্থন করে, তেমনি ইসরায়েল বারবার এসব সংগঠনের উপর আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে।
২০২৪ সালের শেষ দিক থেকে শুরু করে ২০২৫-এর প্রথমার্ধে, গাজা যুদ্ধ ঘিরে উত্তেজনা চরমে ওঠে। ইরান থেকে সরাসরি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অভিযোগ তোলে ইসরায়েল। জবাবে ইসরায়েলও সিরিয়া ও ইরাক সীমান্তে ইরানি ঘাঁটিতে হামলা চালায়। এই প্রতিঘাত ও পাল্টা হামলা এখন একপ্রকার সরাসরি যুদ্ধের রূপ নিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষে, আর রাশিয়া ও চীন অনেকটা পরোক্ষভাবে ইরানের পাশে অবস্থান নিয়েছে। আরব বিশ্ব দ্বিধাবিভক্ত — কেউ কেউ ইরানের প্রতি সহানুভূতিশীল, আবার কেউ চায় অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে। জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করলেও কার্যকর কোনো সমাধান এখনো পাওয়া যায়নি।
এই যুদ্ধ শুধু ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না। এতে সিরিয়া, লেবানন, ইরাক এমনকি ইয়েমেনও জড়িয়ে পড়ছে। মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালানি সরবরাহ হুমকির মুখে পড়েছে, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ছে। অন্যদিকে, লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে, বাড়ছে মানবিক সংকট।
ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ এখনো পূর্ণমাত্রার বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেয়নি, তবে এর সম্ভাবনা অস্বীকার করার উপায় নেই। এই যুদ্ধ বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ও নিরপেক্ষ ভূমিকা প্রয়োজন। একই সঙ্গে মুসলিম বিশ্বের উচিত একত্রিত হয়ে কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা, যেন যুদ্ধের আগুন নিভে আসে এবং শান্তির আলো ফিরিয়ে আনা যায়।