সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে দুই গাড়ির সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৫। ময়মনসিংহে পাচারের সময় মানব কঙ্কাল উদ্ধার, গ্রেপ্তার- ২। কোকোর স্মৃতিতে ৮ দলীয় ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত। বাগেরহাটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লটারি পদ্ধতি বাতিলের দাবীতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন। বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর নাম পরিবর্তন। কালিহাতীতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ট্রাকসহ ৬ ডাকাত গ্রেফতার। বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষক প্রয়োজনঃ ড. আবুল কাশেম। বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্তে মেট্রো চালু করবে ভারত। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ৪ স্পটে দুর্ঘটনার কবলে ১০ গাড়ি, নিহত ১, আহত ১৫। নরসিংদীতে ছাত্রদলকর্মীকে গুলি করে হত্যা।

পীরগাছার ছকিনা’র পরিবারকে চোখ পড়েনি কারো ! স্বামী-সন্তান নিয়ে চরম দুর্ভোগ

আলোকিত স্বপ্নের বিডি
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ১০ জানুয়ারী, ২০২১

মোঃ নাজমুল হুদা, ইয়াস – ভ্রাম্যমাণ ক্রাইম তদন্ত পরিদর্শক, রংপুর জেলাঃ পল্লী কবি জসিম উদ্দিন ষাটদশকের সেই আসমানী কবিতায় লিখেছিলেন ‘আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমুদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও। বাড়ি তো নয় পাখির বাসা, ভিন্ন পাতার ছানি। একটু খানি বৃষ্টি হলে গড়িয়ে পড়ে পানি। একটু খানি হাওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে, তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে’।

তেমনি একাবিংশ শতাব্দীতে এসে জসিম উদ্দিনের আসমানী রুপে পীরগাছার ছকিনা বেগম আজো মাথা গোজার ঠাই পাননি। অভাব-অনটন আর দুর্ভোগে কাটছে তাদের জীবন। সেই কবিতার মর্মবাণী মেন করিয়ে দিচ্ছে পীরগাছার প্রশাসন, রাজনীতিবিদ, সমাজ ও বিত্তবানদের। ভিটে মাটিহীন ছকিনা বেগম সুখের আশায় ১৮ বছর আগে বিয়ে করেছিলেন আরেক ভূমিহীন রফিকুল ইসলামকে।

সুখ তাদের কপালে জোটেনি। অভাব-অনটনে দিন পেরিয়ে গেলেও আজো জোটেনি সরকারি সুযোগ-সুবিধা। অন্যের জমিতে কাটাতে হচ্ছে জীবন। বর্তমানে অসুস্থ্য স্বামী, তিন সন্তান এবং বৃদ্ধ শাশুড়ীকে নিয়ে জীবনযুদ্ধে চালিয়ে যাচ্ছেন ছকিনা বেগম। এ অবস্থায় দিন কাটাতে হচ্ছে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের পূর্বদেবু (আনন্দ বাজার) গ্রামের বাসিন্দা ছকিনা’র পরিবারকে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ছকিনা বেগম তার বৃদ্ধা শাশুড়ীকে নিয়ে অন্যের জমিতে কাজ করছেন। অসুস্থ স্বামী রফিকুল ইসলাম বাড়ির উঠানে বসে আছেন। ছোট একটি কুড়ে ঘর থাকলেও তাতে নেই কোন বেড়া। হু-হু করে ঢুকছে হিমেল বাতাস। বর্ষায় পানিতে নাস্তানাবুদ হতে হয় সকলকে। ওই এলাকার বিত্তশালী অনেক ব্যক্তির চোঁখের কোনায় বসবাস করলেও তারা ফিরে তাকায়নি। দুই মেয়ে, এক ছেলের মধ্যে মেয়ে দু’টি বড়। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। অভাবের তাড়নায় খরচ যোগাতে না পারায় বন্ধ হয়ে যায় সন্তানদের লেখাপড়া।

বাড়ির একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি রফিকুল ইসলাম গত ৬ মাস থেকে অসুস্থ্য। তার মেরুদন্ডের হাড় ক্ষয় হয়ে হাটা-চলা করতে পারেন না। গত ২৯ ডিসেম্বর রফিকুল ইসলামের বাবা বৃদ্ধ কছিম উদ্দিনও অসুস্থ্য হয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যান। তাকে দাফন করা হয় স্থানীয় মসজিদের কবরস্থানে।
রফিকুল ইসলাম বলেন বাবার দাফনের জন্য একমাত্র ছোট বাছুর গরু বিক্রি করে মসজিদ কমিটিকে দিতে হয়েছে ৫ হাজার টাকা। এমনিতেই ভূমিহীন রফিকুলের নাজুক অবস্থা।

তার উপর বাবা’র লাশ দাফনে সমাজপতিদের খড়চ। অর্থের অভাবে রফিকুল ইসলাম বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে। রফিকুলের স্ত্রী ছকিনা বেগম বলেন, অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় আমার ভাসুর ও শশুড় মারা গেছে। এখন স্বামী মৃত্যুর পথযাত্রী। তিন সন্তান নিয়ে কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। কাল কি খাব তাও জানিনা। অসুস্থ্য রফিকুল জানান, ধার-দেনা করে অনেক টাকা খরচ করেছি। এখন আর কেউ ধার-দেনা দেয় না। ওই গ্রামের আব্দুর রশিদ, আব্দুল মান্নান ও জাফর ইকবাল বলেন, এসব অসহায়দের পাশে কেউ নেই। সবাই ভোটের জন্য পাগল।

এ ইউনিয়নে ১২-১৪ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী। কিন্তু কেউ রফিকুলের খোঁজ নেয় না। তার চিকিৎসা ও একটি ঘর দরকার। স্থানীয় মসজিদ কমিটির সাধারন সম্পাদক শাহ জাহান মিয়া বলেন, মসজিদের জায়গায় কবর দেওয়ার নিয়ম অনুযায়ী দাফনের জন্য টাকা নেয়া হয়েছে। তারপরও গ্রামে চাঁদা তুলে কুলখানি করে দেয়া হয়েছে।

ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল কুদ্দুছ ভূইয়া বলেন, আমি মাঝে মাঝে ঔষধ কেনার জন্য তাকে টাকা দিয়েছে। তার অবস্থা শোচনীয়। ওই পরিবারের পাশে সকলের দাঁড়ানো উচিত।

এ ব্যাপারে তাম্বুলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রওশন জমির রবু সরদার বলেন, ওই এলাকার যদি কেউ তাদের জমি দান করেন, তাহলে পরবর্তী তালিকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঘর করে দেয়া হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
  • © All rights reserved © 2019 alokitoswapner-bd.com - It is illegal to use this website without permission.
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102