হজযাত্রীদের নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত সেবা দিতে দেশে ও মক্কা-মদিনায় ‘হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার’ স্থাপন করা হচ্ছে। সেন্টার থেকে হজযাত্রীদের লাগেজ হারানো গেলে এবং কেউ অসুস্থ হলে সেবা প্রদান, উদ্ভূত সমস্যার সমাধান, অভিযোগ নিষ্পত্তি এবং প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত একত্রে পাওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণে একটি অ্যাপও চালু করা হচ্ছে। এই সেন্টার থেকে নির্দিষ্ট অ্যাপের মাধ্যমে ঢাকায় বসে সৌদি আরবে বাংলাদেশি হাজিদের মনিটর করা হবে। প্রত্যেক হজযাত্রীকে সেই অ্যাপের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক দেখভাল করা হবে।
এ ছাড়া এ বছরের হজে হজযাত্রীদের নগদ টাকা বহন করতে হবে না। এজন্য একটি ডেবিট কার্ড দেওয়া হবে। একইসঙ্গে স্বল্পমূল্যে হজযাত্রীদের রোমিং (বাংলাদেশি সিম ব্যবহার করে সৌদি আরবের মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ব্যবহার) সুবিধা দিতে যাচ্ছে সরকার। হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার থেকে হজযাত্রীদের লাগেজ ট্র্যাকিং করারও ব্যবস্থাও চালু হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এসব সেবা শিগগিরই উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য জানান তিনি।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভায় হজ পালন নির্বিঘ্ন করতে দেশে এবং মক্কা ও মদিনায় ‘হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার’ স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টারে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর একটি অ্যাপের মাধ্যমে হজযাত্রীদের বিভিন্ন সেবা প্রদান, উদ্ভূত সমস্যার সমাধান, অভিযোগ নিষ্পত্তি এবং প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত একত্রে প্রাপ্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের কাজ চলছে। এটি আশকোনা হজ অফিসে স্থাপন করা হবে। একইসঙ্গে মক্কা ও মদিনায় আমাদের হজ অফিসে এটি থাকবে। একটি অ্যাপ করা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা সেন্টার ও অ্যাপ উদ্বোধন করবেন। এবারের হজকে সামনে রেখেই এটা করা হবে। অ্যাপটি ইতোমধ্যে প্রস্তুত হয়ে গেছে।’
অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে মোবাইলফোনের হজযাত্রীরা প্রত্যেক দিন ওই দিনের করণীয় এবং যাতায়াতের বিস্তারিত বিবরণ জানতে পারবেন, যেদিন যে দোয়া পড়তে হবে সেটা স্মরণ করিয়ে দেবে, যেসব পবিত্র স্থানে যাবেন, সেসবের ছবিসহ ইতিহাস বর্ণনা থাকবে।
এ ছাড়া হাজিদের মনে কোনো প্রশ্ন জাগলে কল সেন্টারে ফোন করে সে প্রশ্নের উত্তর পাবেন। শরীর খারাপ লাগলে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেবে কল সেন্টারের কর্মকর্তারা। হাজিদের কোনো পরামর্শ থাকলে সেটা পরামর্শ পৃষ্ঠায় লিখে দিতে পারবেন। ভ্রমণের দৈনন্দিন ঝামেলা যেন হজের মূল লক্ষ্যকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, সেজন্য সব ব্যবস্থা অ্যাপে থাকবে বলেও জানিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
এবার বাংলাদেশ থেকে সরকারি মাধ্যমে ৫ হাজার ২০০ জন এবং বেসরকারি মাধ্যমে এজেন্সির মাধ্যমে ৮৭ হাজার ১০০ জন হজ পালন করবেন। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে হজযাত্রী নিবন্ধন শুরু হয়ে শেষ হয় ২৬ ডিসেম্বর। হজযাত্রীদের ভিসা ইস্যু শুরু হয়েছে ১৯ ফেব্রুয়ারি। হজ ফ্লাইট শুরু হবে ২৯ এপ্রিল। এবার হজ কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে ৯৪১টি হজ এজেন্সি।
চলতি বছর সরকারি মাধ্যমে হজ পালনে খরচ সাধারণ প্যাকেজ-১ এ ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা এবং সাধারণ প্যাকেজ-২ এ ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা ধরা হয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারি মাধ্যমে হজ পালনে সাধারণ প্যাকেজে সর্বনিম্ন ব্যয় হচ্ছে ৪ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৬ টাকা।