শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৪ পূর্বাহ্ন

অকালেই ঝড়ে গেল রক্তের ফেরিওয়ালা, সামাজিক সংগঠক রাজবাড়ীর আরাফাত মোল্লার প্রাণ

ফিরোজ আহমেদ, রাজবাড়ি প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
রক্তের ফেরিওয়ালা হিসেবে পরিচিত, একজন সামাজিক সংগঠক, কাজ পাগল তরুণ আরাফাত মোল্লা (২৬) গতকাল সোমবার রাতে মোটরসাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বিপরিত দিক থেকে আসা আরেক মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন। তাকে গোয়ালন্দ থেকে ফরিদপুর এবং ফরিদপুর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

 

সোমবার (২১ সেপ্টম্বর) দিবাগত রাত অনুমান সাড়ে ৯ টার দিকে গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের নতুন ব্রীজ এলাকার ব্রীজের উপরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আরাফাত মোল্লা রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচা গ্রামের প্রবাসী কালাম মোল্লার ছেলে। কালাম মোল্লা এবং আরিফা বেগম দম্পতির দুই মেয়ে ও একমাত্র ছেলে ছিল আরাফাত।

 

আরাফাত মোল্লা জাকের পার্টির অঙ্গ সংগঠন ছাত্রফ্রন্টের রাজবাড়ী জেলার সহ সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া সে প্রথম আলো গোয়ালন্দ বন্ধুসভার সদস্য, গোয়ালন্দ ব্লাড ডোনার ক্লাবের একজন সক্রিয় সদস্য এবং নিয়মিত রক্তদাতা হিসেবে পরিচিত। একজন সামাজিক সংগঠক, স্বেচ্ছাসেবক এবং খেলাধুলায় পারদর্শী ছিলেন।

 

আরাফাত মোল্লার বড় চাচা, আঃ সালাম মোল্লা  জানায়, আরাফাত মোল্লা ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছে। গত শুক্রবার আমার ভাতিজা ৪৭ তম বিসিএস পরিক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরেন। সোমবার বিকেলে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। সন্ধ্যার পর গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের মাখন রায় পাড়া পর্যটন কেন্দ্র নতুন ব্রীজ এলাকায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিল।এরপর সেখান থেকে ফেরার পথে রাত অনুমান সাড়ে ৯ টার দিকে ব্রীজের উপর আসলে অপরদিক থেকে বেপরোয়া গতিতে আসা অল্প বয়সি এক মোটরসাইকেল আরোহী এসে সরাসরি আমার ভাতিজার মোটরসাইকেলের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটায়। এতে সে মাথায় ও মুখে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়।

স্থানীয় লোকজন তাদেরকে উদ্ধার করে প্রথমে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যায়।মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করে। অবস্থার আরো অবনতি হওয়ায় আরাফাতকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত তিনটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরাফাত।

 

নিহত আরাফাতের আরেক চাচা আঃ সামাদ বিলাপ করে বলেন, আমার সোনার ভাতিজা হারালাম। সে গত শুক্রবার বিসিএস পরিক্ষা দিয়েছে। যদি পাশ করে সেই রেজাল্ট কাকে দেখাবো। আমার ভাতিজা ছিলো রক্ত যোদ্ধা। তার দেয়া রক্তে বেচে আছে ২৫-৩০ জন। আর সেই ভাতিজা কারো রক্ত নেয়ার সময় দিলো না। অন্তত ১০ জন বন্ধুবান্ধব রক্ত দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলো।

 

এদিকে দুর্ঘটনায় আহত অপর মোটরসাইকেল আরোহী মো. রাফিন (২১) বর্তমানে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। সে উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের নতুন পাড়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে।

 

গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মো. শরীফ ইসলাম বলেন, সোমবার রাত দশটার দিকে গুরুতর আহত অবস্থায় আরাফাত সহ অপর আরেকজনকে হাসপাতালে আনা হয়। আরাফাতের মাথা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতপ্রাপ্ত হন। তবে মাথায় অভ্যন্তরীন অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ হওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
  • © All rights reserved © 2019 alokitoswapner-bd.com - It is illegal to use this website without permission.
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102