জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) হঠাৎ মার্চ টু গোপালগঞ্জ কমসূচি দেওয়ার কারণ তলিয়ে দেখা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুর বালিকা বিদ্যা নিকেতন মাঠে জেলা বিএনপির আয়োজিত জুলাই-আগস্ট গণুভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে শহীদদের স্মরণ সভায় এ কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে এ্যানি বলেন, ‘মুজিববাদের যদি কবর দিতে হয়, গোপালগঞ্জ যাওয়ার দরকার নেই। মুজিববাদের কবর মুজিববাদই দিয়েছে। মুজিববাদের কবর তো ৭২, ৭৩, ৭৪, ৭৫, গত ১৭ বছর শেখ হাসিনাই দিয়েছে। আমার-আপনার আন্দোলনের মধ্য দিয়েই মুজিববাদের কবর হয়েছে। মুজিববাদের কবর গোপালগঞ্জে গিয়ে দিতে হবে না। এনসিপি সারা দেশে প্রোগ্রাম দিয়েছে জনসংযোগের। হঠাৎ করে তারা প্রোগ্রাম দিয়েছে, মার্চ টু গোপালগঞ্জ। একদিনের ব্যবধানে পরিবর্তন। আমি মনে করি এটি তলিয়ে দেখা দরকার, এর পেছনে কোনো হীন উদ্দেশ্য আছে কি না?’
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘কারণ সামনে তো নির্বাচন। এ ধরনের গন্ডগোল যদি হয়ে যায়, নির্বাচনটা প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে, পড়বে। যে নির্বাচন নিয়েই এখন পর্যন্ত এতগুলো কথা হচ্ছে। তাহলে আপনারা কীভাবে গেলেন, কীভাবে বের হয়ে আসলেন দেশের মানুষ সব দেখেছে। সকাল বেলায় ইউএনওর গাড়ি, পুলিশের গাড়ি নিরাপত্তাহীনতায়, তাহলে চিন্তা করা দরকার ছিল। পরবর্তী কর্মসূচী-ধাপটা কি ধরনের হবে, হওয়ার দরকার ছিল। তাৎক্ষণিক সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারতো।’
এ্যানি আরও বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে। কেন দিচ্ছেন? তারেক রহমান দেশকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছে। জুলা-আগষ্টে তার ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি। জামায়াত ইসলামী এনসিপিকে মিস গাইড করছে কিনা সেটাও দেখা দরকার। পাশাপাশি ৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা কি ছিল? এটা সবার জানা। তারা তো যুদ্ধ করেনি। দেশ স্বাধীনতার সময় জড়িত ছিল না। জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। তবে স্বৈরাচার পতনে এক সাথে লড়াই করেছি, সংগ্রাম করেছি, এটা ঠিক। তাই সবাইকে সামনে কাদা ছোড়াছুড়ি না করে ঐক্যবদ্ধ বা সহনশীল থাকতে হবে।’
এ্যানি বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট ১৭ বছর অত্যাচার-নির্যাতন, গুম-খুন করেছে। তারাই গোপালগঞ্জে সেজ ঢাল-তলোয়ার ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর ঝাপিয়ে পড়েছে। এই প্রশাসন, ইউনুস সাহেবের প্রশাসন। আমরা সবাই মিলে তো সহযোগিতা করছি, সমর্থন দিচ্ছি আন্দোলনের ফসল হিসেবে। কিন্তু সরকারের পরিকল্পনা সম্পন্ন ছিল না। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করেনি। এই সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে অভিযানও শুরু করেনি। ৫ আগস্টের পর সরকার-স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃশ্যমান কাজ ছিল জনগণকে নিরাপত্তা দেওয়া, শান্তিপূর্ণ-স্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করা। সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খুব বেশি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগে হাসিনার সঙ্গে সবাই পালিয়ে যায়নি। সারা দেশ থেকে তারা অন্তত গোপালগঞ্জে গিয়ে হলেও আশ্রয় নিয়েছে। গোপালগঞ্জ এখন পর্যন্ত একটা সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য, গত একটি বছর। ৫ আগস্টের পর সেনাবাহিনী গোপালগঞ্জ গিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। তাদের সাঁজোয়া যানে আগুন দেওয়া হয়েছে। ওই সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর বর্বর হামলা চালিয়েছে। তারা সেনাবাহিনীর গাড়িতে আগুন দিয়েছে। অস্ত্রেসজ্জে সজ্জিত হয়ে তারা মিছিল করেছে। তারা সেখানে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে।’
এর আগে জেলার ৫টি উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে খন্ডখন্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশ স্থলে আসতে থাকেন নেতা-কর্মীরা। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবুল খায়ের ভূইয়া, চট্রগ্রাম বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি হারুনুর রশিদ, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাবুদ্দিন সাবু, বিএনপি নেতা আশরাফ উদ্দিন নিজান, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহসভাপতি ও বিএনপি নেতা ওয়াহিদ উদ্দীন চৌধুরী হ্যাপি, জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক অ্যাডভোকেট হাসিবুর রহমান, বিএনপি নেতা নিজাম উদ্দিন ভূইয়া, অ্যাডভোকেট হারুনুর রশিদ ব্যাপারী, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম লিটন, জেলা যুবদলের সভাপতি আবদুল আলীম হুমায়ুন, সাধারণ সম্পাদক রশিদুল হাসান লিংকন, স্বেছাসেবক দলের সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসিন কবির স্বপন, সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হাসান মাহুমদ ইব্রাহিম ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুনসহ প্রমুখ।