পথের দুই পাশে দাঁড়িয়ে আছেন শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা। প্রথমেই বিদায়ী সহকারী শিক্ষক মো: ওবায়দুল্লাহ আনোয়ার, আবু বকর ও মো: হাবিবুল্লাহসহ আমন্ত্রিত অতিথি,অভিভাবক,সম্মানীত শিক্ষকমন্ডলী,বতর্মান ও প্রাক্তণ সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীগণ বিদায়ী শিক্ষকদের লাল গালিচা সংবর্ধনা প্রদান করে।
ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার কাকনী ইউনিয়নের সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান’ কাকনী মডেল একাডেমি উচ্চ বিদ্যালয়ে দেখা গেল এমন দৃশ্য। যা ছিলো অসাধারণ ও অত্র এলাকায় এই পর্যন্ত বিরল ঘটনা ।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিদ্যালয়ের চত্বরে মাঠে সকাল ১০ টা হতে শুরু হয়ে রাত ১০ পর্যন্ত চলে এই সংবর্ধনার অনুষ্ঠান।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল হক এর সভাপতিত্বে ও সহকারী প্রধান শিক্ষক মিরাস উদ্দিন ও সরকারী শিক্ষক ইমরান এর সঞ্চালনায় এসময় আবেগঘণ শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক কামরুল হক।
বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে বক্তব্য রাখেন, তারাকান্দা উপজেলার নবাগত নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন।
এসময় বিশেষ অতিথি হয়ে বক্তব্য রাখেন, বি.এ.ডি.সি. এর সাবেক চেয়ারম্যান,সাবেক যুগ্ম-সচিব, কবি কাজী নজরুল ইসলাম, গবেষক এ.এফ.এম. হায়াতুল্লাহ,ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ওবায়দুল্লাহ শাহীন, তারাকান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ টিপু সুলতানসহ কমিটির সম্মানিত সদস্য, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধান, বর্তমান ও সাবেক ব্যাচের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ এলাকার সম্মানীত ব্যক্তিবর্গ।
বিদ্যালয়ের সাবেক দুই শিক্ষক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বিদায়ী সংবর্ধনার আয়োজন করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের লোকজন।
‘মঞ্চে বসে ভাবছিলাম, প্রতিদিন নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসতাম। সহকর্মীদের সঙ্গে গল্প–আড্ডা দিতাম। শিক্ষার্থীদের হইচই। কর্মজীবনে কতই না অভিজ্ঞতা। জীবনের বেশির ভাগ সময়টা বিদ্যালয়ে কাটালাম। আজ থেকে আর বিদ্যালয়ে আসা হবে না। মনটা খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু সহকর্মী শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অতিথিরা যেভাবে বিদায় জানালেন, মনটা ভরে গেল। জীবনের স্মৃতি হয়ে থাকবে বিদায়ের আজকের এই আনন্দটাই।
অনুষ্ঠানে বিদায়ী শিক্ষকদের উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া তাদের সম্মাননা ক্রেস্ট ও অন্যান্য সামগ্রী উপহার হিসেবে প্রদান করা হয়।
শেষে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এতে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সংগীত ও কবিতাসহ কৌতুক পরিবেশন করেন।
বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে আবেগপ্রবণ হয়ে যান। তারা বলেন, ‘এভাবে আমাদের আনন্দ দিয়ে বিদায় জানানো হবে, কখনো ভাবিনি। খুব ভালো লাগল। বিদায়ের সময় যে কষ্ট পেতাম, তা পেলাম না। বিদায়ের দিনেও সম্মান নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি।
জানা গেছে,বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সহকারী শিক্ষক আবু বকর, মোঃ হাবিবুল্লাহ ও মোঃ উবায়দুল্লাহ আনোয়ার ১৯৯৫ সালে যোগদান করে দীর্ঘ ৩০ বছরের সুদীর্ঘ সময় সততা ও নিষ্ঠার সাথে শিক্ষকতা করেছেন।
সবার সঙ্গে গড়ে ওঠেছে প্রীতি আর ভালোবাসার নিবিড় এক সুসম্পর্ক। তাইতো বিদায়ের দিনে হাজির হন সকল প্রাক্তন শিক্ষার্থীসহ এলাকার নানা শ্রেণী পেশার মানুষ।
উল্লেখ্য এতোটা জমকালো আয়োজনে ইতিপূর্বে অত্র উপজেলায় আর কাউকে বিদায় দেওয়া হয়নি যা নজির স্থাপন করেছে এলাকাতে, ভবিষ্যতে সকল সম্মানিত শিক্ষাগুরুদের এভাবেই বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হবে বলে উপস্থিত অতিথি সহ সকলে এমন মতামত ব্যাক্ত করেন।