শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৫৪ অপরাহ্ন

প্রথম ধাপে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে রাজি মিয়ানমার

আলোকিত স্বপ্নের বিডি
  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৫

প্রথম ধাপে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার। শুক্রবার (৪ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনার পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ড. খলিলুর রহমান বলেন, প্রথম ধাপে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার রাজি হয়েছে। তিনি আরও জানান, আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়ার জন্য যাচাইবাছাই প্রক্রিয়া চলছে এবং শীঘ্রই এর অগ্রগতি জানা যাবে।

এ সিদ্ধান্তের ফলে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে এটি বিবেচিত হচ্ছে। তবে, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে সমন্বয় সাধনে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে আরও আলোচনার প্রয়োজন হতে পারে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

এরআগেও বিভিন্ন সময় অনেক রোহিঙ্গা এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ২০১৭ সালের পরও অনেকে এসেছেন। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসা এখনও থামেনি।

সবমিলিয়ে এখন ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তারা কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন ক্যাম্পের অবস্থান করছেন।

তবে এরমধ্যেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের মধ্যস্থতায় বিগত সাড়ে সাত বছরে নেওয়া তিন দফা উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে।

রোহিঙ্গারা ২০১৭ সালের আগস্টে এদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর নভেম্বরে চীনের মধ্যস্থতায় মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি করে বাংলাদেশ।

চুক্তি অনুযায়ী দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার ভিত্তিতে ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটিকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।

এরপর ২০১৯ সালের আগস্টে চীনের উদ্যোগে আরেকটি প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টা নেওয়া হয়, কিন্তু নাগরিকত্বের বিষয়টির সমাধান না হওয়ায় রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় যেতে চায়নি।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শাসনক্ষমতা দখল করার পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত আলোচনা কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।

২০২৩ সালের এপ্রিলে চীনের তরফ থেকে তৃতীয় দফা উদ্যোগ নেওয়া হয়। চীনের কুনমিংয়ে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয় এবং মে মাসে চীনের উদ্যোগে মিয়ানমার প্রত্যাবাসনের সম্ভাব্যতা যাচাই ও পাইলট প্রকল্প হাতে নেয়।

এ উদ্যোগের পর কয়েক দফায় রোহিঙ্গাসহ উভয় দেশের প্রতিনিধিরা প্রত্যাবাসনের সম্ভাব্যতা যাচাই করে। মিয়ানমারে ফেরার জন্য নির্বাচিত রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পগুলোয় একত্রিত করা হয়। কিন্তু আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার জান্তা সরকারের সঙ্গে চলমান যুদ্ধে প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া থেমে যায়।

মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য উপযুক্ত নয় বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। চলমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বর্তমানে থেমে ছিল। ফলে রোহিঙ্গা ইস্যুটি দীর্ঘমেয়াদি সংকটে দিকে যাচ্ছে।

তবে আজ শুক্রবার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের কথা নিশ্চিত করেছে মিয়ানমার। থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে এক বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমানের কাছে মিয়ানমারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উ থান শিউ এ কথা জানান।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, ২০১৮ থেকে ২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ছয় দফায় এই তালিকাটি মিয়ানমারকে দিয়েছিল। এছাড়া আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গার চূড়ান্ত যাচাইকরণের কাজ চলছে বলে জানানো হয়।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ৮০ লাখ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ফিরিয়ে নিলে তা হবে প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে বড় সাফল্য। চলমান রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের দিকে এই প্রথমবারের মতো কোনো তালিকার বিষয়টি নিশ্চিত করল মিয়ানমার। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আরও ৫ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গার পরিচয় যাচাইয়ের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
  • © All rights reserved © 2019 alokitoswapner-bd.com - It is illegal to use this website without permission.
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102