ব্যয়বহুল বেসরকারি খাতের বিদেশী ঋণ কমতে শুরু করেছে। স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি বিদেশী ঋণ ব্যাপকভাবে পরিশোধ শুরু করা হয়েছে। মাত্র তিন মাসেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে হাত না দিয়েও এমন পাঁচ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি দুই বিলিয়ন ও দীর্ঘমেয়াদি তিন বিলিয়ন ডলার রয়েছে। ফলে শুধু বেসরকারি খাতেই বিদেশী ঋণ কমেছে ১২১ কোটি ডলার, যা শতকরা হিসেবে প্রায় ১১ ভাগ।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর শনিবার (১৯ অক্টোবর) গণমাধ্যমকে বলেন, আগে ব্যাংকগুলোতে ডলারের সংকট ছিল। এখন অধিকাংশ ব্যাংকে ডলারের মজুত বেড়েছে। তিনি বলেন, টাকার সংকট থাকলেও ব্যাংকগুলোতে এখন ডলারের সংকট নেই। তিনি উল্লেখ করেন, প্রবাসীরা মূলত ব্যাংকে ডলার পাঠায় রেমিট্যান্স আকারে। রফতানি আয়ের টাকাও প্রথমে ব্যাংকেই জমা হয়। অর্থাৎ ডলার প্রথমে ব্যাংকগুলোতেই জমা থাকে। তারপর প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যাংকগুলো এলসি খোলে অথবা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করে দেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কিনে রিজার্ভে জমা করে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণের স্থিতি বেড়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বেড়ে এক হাজার ৬৪২ কোটি ডলারে উঠেছিল। এরপর থেকে ঋণ পরিশোধ বাড়ায় ঋণের স্থিতি কমতে শুরু করে। গত সরকার জুলাইয়ে ঋণের স্থিতি রেখে গিয়েছিল এক হাজার ১৩২ কোটি ডলার। আগস্টে তা আরো কমে এক হাজার ১২০ কোটি ডলার ও সেপ্টেম্বরে এক হাজার ৭৩ কোটি ডলারে নেমে যায়। গত অক্টোবরে তা আরো কমে দাঁড়ায় এক হাজার ১১ কোটি ডলারে। গত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এ খাতে ঋণের স্থিতি কমেছে ১২১ কোটি ডলার বা প্রায় ১১ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে আগের সরকারের আমলে বকেয়া বা স্থগিত করা বৈদেশিক ঋণের স্থিতিও কমতে শুরু করেছে। কারণ এসব ঋণও কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিশোধ করছে। গত আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সরকার আগের স্থগিত করা স্বল্পমেয়াদি ঋণের মধ্যে প্রায় ২০০ কোটি ডলার পরিশোধ করেছে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদি ঋণ শোধ করেছে প্রায় ৩০০ কোটি ডলার। দুই খাতে ৫০০ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এসব ঋণ পরিশোধ করতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে হাত দিতে হয়নি। রিজার্ভে হাত দেয়া ছাড়াই কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজস্ব উৎস থেকে এসব ঋণ পরিশোধ করেছে। এতে সামগ্রিক স্থিতিশীলতা আবারো ফিরে আসছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
গভর্নর বলেন, এসব বকেয়া পরিশোধের পর, চাপ কমবে আর্থিক ব্যবস্থাপনায়। যা গতি বাড়াবে সার্বিক কর্মকাণ্ডে। একই সঙ্গে, প্রস্তুতি চলছে বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে আরও প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার ঋণ সংগ্রহের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, যদি আমি আইএমএফ থেকে ২ থেকে ৩ বিলিয়ন অতিরিক্ত পাই, এর সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের আরও ২ বিলিয়ন পাই। তাহলে অর্থনৈতিক কার্যক্রম আরও কিছুটা গতিশীল পাবে।
প্রসঙ্গত, জ্বালানি তেল, গ্যাস, কয়লাসহ যাবতীয় পেট্রোলিয়াম পণ্যের প্রায় পুরোটাই আমদানি করতে হয় বিভিন্ন উৎস থেকে। যার পেছনে সবশেষ অর্থবছরে ব্যয় হয় প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া, বিদ্যুৎ ও সারের ক্ষেত্রেও নির্ভরতা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু, গেলো বছর দুয়েক ধরে ডলার সঙ্কট শুরু হলে, সেই ব্যয় পরিশোধ করা যায়নি সময়মতো। আদানি, কাফকোসহ, শেভরন ও বিপিসিকে সরবরাহকারী বেশকিছু বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া পড়ে যায় সোয়া দুই বিলিয়ন ডলারের ওপরে। তবে, গেলো দুই মাসে রিজার্ভে হাত না দিয়েই, সেই বকেয়ার দেড় বিলিয়ন পরিশোধ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাকি অংশও মাস দুয়েকের মধ্যে মিটিয়ে দেওয়ার আশা গভর্নরের।