ইবি শিক্ষক ড. নাছির উদ্দীনের নতুন বই ‘ইন্টারনেটে বিবাহ এবং বিচ্ছেদ’।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল-ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি এবং সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন আযহারী’র ‘ইন্টারনেটে বিবাহ এবং বিচ্ছেদ: একটি তুলনামূলক ফিকহী পর্যালোচনা’ শীর্ষক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ১৮৪ পৃষ্ঠার বইটি গত ১২ই সেপ্টেম্বর ‘স্বরবর্ণ প্রকাশন’ ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
জানা যায়, বাংলা ভাষায় এই বিষয়ে এটিই প্রথম গ্রন্থ। গ্রন্থটিতে অনলাইনে বিবাহ ও বিচ্ছেদ বিষয়ে আদ্যোপান্ত আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিবাহ এবং বিচ্ছেদের বিধি-বিধান বিভিন্ন মাযহাবের আলোকে তুলনামূলক পদ্ধতিতে প্রণিধানযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য মতামত পেশ করা হয়েছে।
প্রযুক্তি নির্ভর আজকের বিশ্বে ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে মানুষ বৈবাহিক ও সামাজিক সম্পর্ক সম্পাদন করছে। এসব ক্ষেত্রে চুক্তিরত উভয় পক্ষের স্থানগত ঐক্য না থাকলেও ইন্টারনেটের মাধ্যমে তারা পরস্পরকে শুনার ও দেখার সুযোগ পাচ্ছে। তেমনিভাবে তালাক ও অন্যান্য বিচ্ছেদ এ মাধ্যমে হচ্ছে। এই চুক্তিসমূহের বৈধতা আর এ সম্পর্কে ইসলামী শরী‘য়াহর বক্তব্য নিয়ে অনেকের কাছে অস্পষ্টতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে এসব চুক্তির ধরন, বৈচিত্র্য ও ব্যাপক বিস্তার বিষয়টিকে যেমন জটিল করেছে; তেমনিভাবে এ ব্যাপারে ইসলামী শরী‘য়াহর দৃষ্টিভঙ্গি, ক্লাসিক্যাল ফিকহে এর নজির সন্ধান ও সমসাময়িক শরী‘য়াহ স্কলারদের সুচিন্তিত মতামত উপস্থাপন করার প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে। তাই এ গবেষণাকর্মটিতে উক্ত বিষয়সমূহ ইন্টারনেটের মাধ্যমে সম্পাদনের সম্ভাবনা, স্বরূপ, শর‘য়ী গ্রহণযোগ্যতা ও এতদসংক্রান্ত বিধি-বিধান সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
বিষয়সমূহে দালিলিক প্রমাণসহ আলোচনা, পর্যালোচনা, বিশ্লেষণ ও নিরীক্ষা, ইসলামী ফিকহ শাস্ত্রের মৌলিক এবং গ্রহণযোগ্য আধুনিক গ্রন্থাবলির সাহায্যে স্বীকৃত গবেষণা রীতি-নীতির আলোকে তুলনামূলক ফিকহ পদ্ধতিতে ইসলামী সমাধান পাওয়া যাবে। তাছাড়া ইন্টারনেটের প্রকৃতি পরিচিতি, সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে ধারণার পাশাপাশি এ বিষয়ক ঝুঁকি ও নিরাপত্তা সম্পর্কে জানা যাবে।
এ বিষয়ে ড. মোহাম্মদ নাছির বলেন, “আমি দেখেছি অনেক সময় অনলাইন চুক্তি অফ-লাইন চুক্তির চেয়ে শক্তিশালী। অফলাইনের লেখা মুছে যায় কিংবা ঘষা যায়। কিন্তু অনলাইনে সেটা সেফ রেখে পরবর্তীতে ব্যবহার করা যায়। অনেক সময় চুক্তিনামা পুড়ে গেলেও অনলাইনে এটা সংরক্ষণ থাকে। অনলাইনের বাইরে আমরা অনেক সময় এটা অস্বীকার করতে পারি কিন্তু অন-লাইনে সংরক্ষিত বায়োমেট্রিক ও ডিজিটাল স্বাক্ষর অস্বীকার করতে পারিনা। তাছাড়া অন-লাইনে অডিও/ভিডিও রেকর্ড তো আছেই। বাংলাদেশে ডিজিটাল আইন আছে। ডিজিটাল আইন এই সমস্ত দালিলিক প্রমাণ গুলো গ্রহণ করে।”
তিনি বলেন, “এটা সাধারণ পাঠক এবং বিশেষ করে যারা ‘ল’ প্র্যাকটিস করে, অন-লাইন বিবাহ অথবা বিচ্ছেদ সম্পর্কে বিধান জানতে চায় তারা এই বইটিতে এর সমাধান পাবে। সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কেও বইটি ধারণা দিবে। এর মাধ্যমে মানুষ সংশোধিত হবে, সাবধান হবে। সর্বোপরি এই বইটি দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ও সামাজিক নিরাপত্তায় ভুমিকা রাখবে বলে আশা করি।”
এর আগে ড. নাছিরের “শর‘য়ী বিধান: মূলনীতি ও প্রয়োগ” শিরোনামে একটি বই প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে শরয়ী বিধান’র বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সেটাও উক্ত বিষয়ে বাংলা ভাষায় প্রথম বই।
উল্লেখ্য, বইটি অনলাইনে রকমারিতে এবং অফলাইনে স্বরবর্ণ প্রকাশন ৩৩, ৩৪ ইসলামীয়া টাওয়ার বাংলাবাজার, ঢাকা, নিউ লেখা প্রকাশনী ৫৭ ডি কলেজ স্ট্রিট, কোলকাতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগে পাওয়া যাবে।