মোঃ আরমান হোসেন, দিনাজপুর প্রতিনিধি ॥ একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা যে দেশটি পেলাম, স্বভাবতই আশা করেছিলাম স্বাধীন দেশে আমাদের সংস্কৃতির বিকাশ ঘটবে বাধাহীনভাবে। কিন্তু ৭১ এর পরাজিত শক্তি, পাকিস্তান ও তার আন্তর্জাতিক মিত্ররাসহ এদেশীয় এক শ্রেণির পাকিস্তানপ্রেমী ধর্ম ব্যবসায়ী স্বাধীনতা বিরোধীরা যেমন স্বাধীন বাংলাদেশকে মেনে নেয়নি, তেমনি মেনে নেয়নি বাঙালির মুক্তির দূত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য বিরোধী ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙ্গে ধর্মীয় উম্মাদনা সৃষ্টিকারী উগ্র সাম্প্রদায়িক অপশক্তি পাকিস্তানী প্রেতাত্মা ধর্ম ব্যবসায়ী স্বাধীনতা বিরোধীদের কঠোর হস্তে দমন করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
৬ ডিসেম্বর রোববার প্রেসক্লাব সম্মুখ সড়কে ‘দীর্ঘজীবী বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে মিত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য বিরোধী ও ভাস্কর্য ভাঙ্গার প্রতিবাদে উগ্র সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক কমিটি দিনাজপুর জেলা শাখা আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচীতে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সচেতন নাগরিক কমিটি জেলা শাখার সভাপতি আব্দুল মালেক সরকার এর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সদস্য সচিব রতন সিং। অন্যতম সদস্য সৈকত পাল এর সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক গোলাম নবী দুলাল, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমান, সাংবাদিক আবুল কাসেম, সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য আল মামুন বিপ্লব, নাটালিয়ান মারান্ডি, মল্লিকা রাণী দাস, রাবেয়া খাতুন রানু প্রমুখ।
বক্তারা আরও বলেন, বাঙালির ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঘটনা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং শ্রেষ্ঠ অর্জন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। আর এ স্বাধীনতার মহানায়ক হলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
স্বাধীন বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানী প্রেতাত্মা ধর্ম ব্যবসায়ী স্বাধীনতা বিরোধীরা রাষ্ট্রের স্থপতির ভাস্কর্য ভাঙ্গার দুঃসাহসে স্তম্ভিত সবাই। এ শুধু বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙ্গা নয়, বাঙালি জাতিসত্তা এবং হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধুলায় মিশিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা।
আমরা সবাই জানি ভাস্কর্য একটি জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মারক বহন করে। হাজার বছরের লড়াই-সংগ্রামের বীরত্বগাঁথা এবং শ্রেষ্ঠ মনীষীদের অবদানকে নতুন প্রজন্মের পরম্পরায় জীবন্ত করে রাখা। এই ভাস্কর্য নির্মাণের সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক বা বিরোধ নেই। হাজার বছরের মুসলিম সভ্যতার দিকে যদি আমরা তাকাই তাহলে দেখব বিশ্বের অনেক ইসলামি দেশগুলোতে সংস্কৃতির নানা উপস্থাপনের মধ্যে ভাস্কর্য অন্যতম প্রধান হিসেবে স্থান করে আছে। ধর্মের অপব্যখ্যা দিয়ে স্বাধীনতা বিরোধী ধর্ম ব্যবসায়ীরা ভাস্কর্যকে ইসলামবিরোধী বলে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন-তারা কি অপরাপর ইসলামিক দেশগুলোর দিকে একবার তাকিয়ে দেখেছেন? বক্তারা দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে যারা অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে এ সকল অপশক্তিকে কঠোর হস্তে দমন করার আহবান জানান।