লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারীতে কোরআন অবমানার গুজব ছড়িয়ে শহিদুন্নবী জুয়েল (৩৫) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে মরদেহ আগুনে পুড়িয়ে ছাই করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এ ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) সকালে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন জেলা প্রশাসক আবু জাফর। এর আগে বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে স্থানীয়দের ছোড়া পাথরের আঘাতে পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন্ত কুমার মোহন্তসহ ১০ পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উছলে পড়া ভিড়ে ১৭ রাউন্ড ফাঁকাগুলি ছোড়ে পুলিশ ।

নিহত যুবক শহিদুন্নবী জুয়েল রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রীপাড়া এলাকার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক ছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, শহিদুন্নবী জুয়েল বৃহস্পতিবার বিকেলে সুলতান যোবাইয়ের আব্দার নামে একজন সঙ্গীসহ বুড়িমারী বেড়াতে আসেন। বিকেলে বুড়িমারী কেন্দ্রীয় মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করেন তারা। নামাজ শেষে পাঠ করার জন্য মসজিদের সানসেটে রাখা কোরআন শরীফ নামাতে গিয়ে অসাবধনাতাবশত কয়েকটি কোরআন ও হাদিসের বই তার পায়ে পড়ে যায়। এ সময় তুলে চুম্বনও করেন জুয়েল। বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে মসজিদের মুয়াজ্জিনের কথা কাটাকাটি ও পরে হাতাহাতি হয়। এরপর মসজিদের বাহিরে থাকা লোকজন ছুটে এসে তাদের মারধর করে।

খবর পেয়ে বুড়িমারী ইউপি সদস্য হাফিজুল ইসলাম ঘটনাস্থলে এসে তাদের (জুয়েল ও সুলতান যোবাইয়েরকে) নিয়ে পাশে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের একটি কক্ষে আটকে তালাবদ্ধ করে। ইতিমধ্যেই পুরো বাজারে এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, কোরআন অবমাননার কারণে দুই যুবককে আটক করা হয়েছে। এ সময় উত্তেজিত হয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের দরজা জানালা ভেঙে জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে মরদেহ টেনে পাটগ্রাম বুড়িমারী মহাসড়কে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেয় স্থানীয় জনগন।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা থানা পুলিশ, বিজিবি ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দফায় দফায় চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতার ছোড়া ইট পাথরের আঘাতে পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন্ত কুমার মোহন্তসহ ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হন।

পরে রাত ১০টায় লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর ও পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। নিহত জুয়েলের সঙ্গী সুলতান যোবাইয়েরকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন্ত কুমার মোহন্ত বলেন, তুচ্ছ এক ঘটনায় বিতর্ক থেকে উৎসুক জনতার মাঝে গুজব ছড়ানোর কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, জুয়েল ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের গ্রন্থাগারিক ছিলেন। মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় কয়েক বছর আগে তিনি গ্রন্থাগারিক পদ থেকে চাকরিচ্যুত হয়েছিল।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনায় মামলা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে ঘটনা তদন্তে ৩ দিনের সময় দিয়ে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

লালমনিরহাট জেলা পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, পুরো ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি র‌্যারের টহল বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

এএসবিডি/আরএইচএস