গত নয় মাসে জুলাই আন্দোলনকারী ও শহীদদের পরিবারের ওপরে যেসব হামলা হয়েছে তার মধ্যে ২৭টিতে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এসব হামলার মধ্যে ১৩টি ঘটনায় (প্রায় ৪৮%) হামলার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ ও দলটির সহযোগী সংগঠনসমূহের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। বাকিগুলোতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং ছাত্র শিবিরের জড়িত থাকার অভিযোগ এখন প্রকাশ্য।
এই সময়কালে বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের ওপরে ৩৬টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে নয়টির সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, এসব ঘটনার বাইরে আরও হামলার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে, যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি অথবা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও গবেষণা সীমাবদ্ধতার কারণে ফলাফলে উঠে আসেনি।
জুলাইয়ের শহীদদের কবরে হামলার একাধিক ঘটনার সংবাদ গণমাধ্যমে এসেছে। যেমন গত ২৬ এপ্রিল ঢাকার কেরানীগঞ্জে থাকা শহীদ ফয়জুল ইসলাম রাজনের কবর ভাঙচুর করা হয়েছে। দৈনিক ইত্তেফাকের সংবাদ অনুযায়ী, এ ঘটনায় শ্রমিকদলের একজন নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। এর আগে গত ১৪ মার্চ কেরানীগঞ্জেই শহীদ সায়েমের কবর ভাঙচুর করা হয়, যেখানে শহীদের মা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলামকে দায়ী করেন।
২৭টি হামলার সাথে জড়িতদের সবচেয়ে বড় অংশ আওয়ামী লীগ অথবা এর সহযোগী সংগঠনের (ছাত্রলীগ/যুবলীগ) নেতাকর্মীরা। ৩৬টি ঘটনার মধ্যে ১৩টিতেই তাদের সম্পর্ক ছিল। যেমন: গত জানুয়ারি মাসের ২৫ তারিখ গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের এক কর্মীকে আটক করে পুলিশে দেওয়ার সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়কের ওপর হামলা করে দলটির নেতাকর্মীরা। প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী এ সময় দুইজন সাংবাদিকও আহত হন।
একইভাবে গতবছরের ডিসেম্বরের ২১ তারিখ ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মোবারক হোসেন অভিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর ঘটনায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ নোমানকে গ্রেফতার করা হয়।
আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর পরেই আছে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। তারা মোট ৯টি ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন। যেমন: গত ১৬ এপ্রিল স্থানীয় বিরোধের জের ধরে চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি মেহেদী হাসান খান বাবুকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে গড়াইটুপি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
এদিকে মাত্র ৯ দিন আগেই বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা রিয়াদ হাসানকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে এক বিএনপি নেতার ছেলের বিরুদ্ধে। আহত রিয়াদ হাসান গাবতলী উপজেলার শালুকগাড়ী এলাকার বাসিন্দা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বগুড়ার যুগ্ম আহ্বায়ক। অন্যদিকে অভিযুক্ত সিফাত বগুড়া জেলা বিএনপির সদস্য ও পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফারুকের ছেলে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্তর্বর্তী বিরোধের জের ধরে আরো ২টি হামলার ঘটনা ঘটেছে খুলনা ও বরগুনাতে। গত ৩ জানুয়ারি খুলনার শিববাড়ি মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক গ্রুপের আক্রমণে আহত হন অন্য গ্রুপের ৮ জন শিক্ষার্থী। বরগুনাতেও সমন্বয়ক মীর নীলয়ের গ্রুপের হামলায় আহত হন সমন্বয়ক রেজাউল করিমসহ চার জন।
এছাড়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের শিবির ট্যাগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে ১ জন সমন্বয়ক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেমঘটিত কারণে ভুল বোঝাবুঝির জের ধরে আরেকজন সমন্বয়কের ওপর হামলা করা হয়েছে।
শেষ ঘটনাটি মূলত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষ। জাতীয় দৈনিক কালবেলার প্রতিবেদন অনুযায়ী, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ওমর ফারুক সাগরের ওপর হামলা চালায় ছাত্রশিবিরের সদস্যরা।