নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজধানীর সদরঘাট থেকে কামারপাড়া পথে চলাচলকারী ভিক্টর পরিবহনের বাসগুলোতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কয়েকজন নেতা চাঁদা দাবি করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল ইসলাম। চাঁদাবাজির প্রতিবাদে একদিন আগে ১৩০টি বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় মালিকপক্ষ।
আশরাফুল ইসলামের অভিযোগ, এ বিষয়ে রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হলেও মামলা নিচ্ছে না পুলিশ। গত ৩০ সেপ্টেম্বর চাঁদাবাজির ঘটনায় ভিক্টর পরিবহনের চেয়ারম্যান সাধারণ ডায়েরি করেন। যার জিডি নম্বর ১৬১৯।
জিডিতে পরিবহনের চেয়ারম্যান মো. হোসাইন রফিকুল আলম (দিপু) উল্লেখ করেন, ভিক্টর ক্লাসিক বাস মালিক পরিবহন লিমিটেডের সভাপতি থাকাকালীন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ৩/১১/১৬ তারিখ থেকে ১৭/১২/২০১৮ তারিখ পর্যন্ত কমিটির অনুমোদন দেয়। যার প্রেক্ষাপটে বিআরটিএ থেকে ওই সময়ের নামে সদরঘাট থেকে বাইপাইল পর্যন্ত রুট পারমিট পাই। পরে ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষে এবং কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় আমাদের সবার সম্মতিক্রমে ভিক্টর বাস মালিক পরিবহন লিমিটেডের নামে বিগত ১০/৭/২০১৯ তারিখে আমি মো. হোসাইন রফিকুল আলম (দিপু) চেয়ারম্যান, আশরাফুল ইসলাম আশরাফকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক, গোলাম ফারুক মানিককে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, মামুন মিয়া ও আল আমিন বুলবুলকে পরিচালক করে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধক (আরজেএসসি) থেকে নিবন্ধন করাই। যার রেজিস্ট্রার নম্বর সি ১৫৩২৩২/২০১৯ এবং এরপর থেকে আমরা সুষ্ঠুভাবে কোম্পানি পরিচালনা করে আসছি।
তিনি আরও বলেন, কিন্তু আমাদের কোম্পানির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম ফারুক মানিক বিগত ২৫/০৯/২০২০ তারিখ থেকে কোম্পানির নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নিজের কর্তৃত্ব দেখায় এবং সেই সঙ্গে শুভ, নিজাম, মনিরসহ কিছু যুবলীগ পরিচয়ধারী বেপরোয়া লোকজন আমাদের কোম্পানির গাড়িগুলো থেকে চাঁদা দাবি করেন। কোম্পানির স্টিকারযুক্ত সব কাগজ ছিঁড়ে ফেলে দেয়।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, আমরা তাদের এমন অনৈতিক কাজে বাধা দিতে গেলে তারা বিভিন্নভাবে হয়রানি করে এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
রফিকুল আলম (দীপু) বলেন, আমরা সবাই পরিবহন মালিক শ্রমিক লীগের সঙ্গে যুক্ত। সবাই আওয়ামী পরিবারের লোক। তারপরও এখন আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।
ভিক্টর পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত থাকা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ঢাকা মহানগর শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শাহীন জানান, ভিক্টর পরিবহন থেকে বহিষ্কৃত নেতা ও ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের মোয়াজ্জেম, মানিক, ফয়সাল ও মিজান স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কিছু লোক নিয়ে ভিক্টর পরিবহনের বাসপ্রতি দৈনিক ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে চাঁদা দাবি করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সকালে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক আরিফ মুন্সী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব, কোতোয়ালি থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সজল ও আমিরুল ইসলাম মুন্না ভিক্টর পরিবহনের কাউন্টার বন্ধ করে দেন এবং ভাঙচুর করেন।
তিনি জানান, প্রতিবাদে গত শুক্রবার মালিক ও শ্রমিকরা মিলে পরিবহনটি সাত ঘণ্টা বন্ধ রাখে। পরে পুলিশ মামলা নেবে ও অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করবে বলে আশ্বাস দিলে বাস চলাচল আবার শুরু হয়। তবে শনিবার পর্যন্তও মামলা নেয়নি পুলিশ। গ্রেপ্তার করেনি কাউকে।
ভিক্টর ক্লাসিক বাস মালিক পরিবহন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল ইসলাম বলেন, জিডি করার পর গতকাল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জুবায়ের আহমেদ আমাকে কল দেন। কল দিয়ে আমাকে চাপ দেন তার সঙ্গে দেখা করার জন্য। এসব করে লাভ নেই বলে আমাকে জানান জুবায়ের। এরপর আবার রামপুরা থানা ছাত্রলীগের সভাপতিকে আমার কাছে পাঠান এবং জুবায়েরের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। আমি তাতেও রাজি হয়নি। কারণ আমি একা এ বিষয়ে সমাধানের জন্য যেতে পারি না।
এ বিষয়ে দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জুবায়ের আহমেদ বলেন, তারা বাস বন্ধ করার কারণে যাত্রীরা সমস্যা পড়েছেন। তাই মানবিক কারণে আমি কল দিয়েছি। তাদের অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয় নিয়ে কোনো কথা বলিনি।
যোগাযোগ করা হলে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, আমি একটি জিডির কপি পেয়েছি। সেটার তদন্ত চলছে। আর যদি কেউ মামলা করতে চায়, তাহলে অবশ্যই মামলা নেওয়া হবে।
ভিক্টর ক্লাসিক বাস মালিক পরিবহন লিমিটেডের কোম্পানীর ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর গোলাম ফারুক মানিক চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করে বলে, এটি মিথ্যা অভিযোগ। আশরাফ নিজেই একজন চাঁদাবাজ। আমি ৩০ বছর ধরে গাড়ির ব্যবসা করি। আমি চাঁদাবাজি করি না।
এএসবিডি/আজগর আলী মানিক/এএমএম