সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

সাগর-রুনি হত্যা মামলাঃ প্রতিবেদন দাখিল পেছানোর সেঞ্চুরি হচ্ছে কাল।

প্রতিবেদকঃ শেখ মিজানুর রহমান
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ৬ আগস্ট, ২০২৩

সাগর-রুনি হত্যা মামলাঃ প্রতিবেদন দাখিল পেছানোর সেঞ্চুরি হচ্ছে কাল।

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের পর পেরিয়েছে সাড়ে ১১ বছর। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তারা বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই খুনিদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা হবে। এরপর শত শত ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়েছে। কূল-কিনারা হয়নি আলোচিত এ মামলার।

দীর্ঘ সময় পেরিয়ে মামলার তদন্ত প্রতিবেদনও জমা হয়নি। প্রতিবেদন দিতে এরই মধ্যে ৯৯ বার সময় নিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। সোমবার (৭ আগস্ট) মামলার প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। আদালত থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য মতে, এখনো প্রতিবেদন দাখিল হয়নি। প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এদিন (৭ আগস্ট) আবারও নতুন দিন ধার্য করা হবে। ফলে প্রতিবেদন দাখিল ১০০ বারের মতো পেছাবে।

দীর্ঘ সময় পেরিয়েও মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না হওয়ায় হতাশ সাগর-রুনির পরিবার। তদন্ত সংস্থা র‍্যাব বলছে, গুরুত্ব সহকারে মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, মামলার তদন্ত সংস্থা যদি তদন্ত করতে না পারে অন্য কোনো সংস্থা দিয়ে তদন্ত করা যেতে পারে।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক গোলাম মোস্তফা সারোয়ার ওরফে সাগর সারোয়ার ও তার স্ত্রী এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন নাহার রুনা ওরফে মেহেরুন রুনি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় খুন হন। তখন বাসায় ছিল তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সারোয়ার মেঘ। হত্যাকাণ্ডের পর রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা করেন।

চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তারা বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই খুনিদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা হবে। অথচ এরপর শত শত ঘণ্টা পেরিয়েছে। এত সময় পার হলেও এখনো মামলার বিচারই শুরু করা যায়নি। যদিও এই সাংবাদিক দম্পতির হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে বিভিন্ন সময় রাজপথে আন্দোলন করেছেন তাদের সহকর্মীরা।

দীর্ঘ সাড়ে ১১ বছরে মামলার তদন্তকারী সংস্থাও পরিবর্তন হয়েছে কয়েকবার। প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন শেরেবাংলা নগর থানার এক উপ-পরিদর্শক (এসআই)। চারদিন পর চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তভার হস্তান্তর হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে। দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে ডিবি রহস্য উদ্ঘাটনে ব্যর্থ হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার যায় র‍্যাবে।

মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর ১০ বছর ১০ মাস গড়ালেও র‍্যাব এখনো কোনো প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি।

এদিকে মামলার পর রুনির বন্ধু তানভীর রহমানসহ মোট আটজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার অন্য আসামিরা হলেন বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুন, পলাশ রুদ্র পাল ও আবু সাঈদ। এদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ রুদ্র জামিনে। অন্য আসামিরা এখনো কারাগারে।

এ বিষয়ে মামলার বাদী নওশের আলম রোমান গণমাধ্যমকে বলেন, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সাড়ে ১১ বছর হয়ে গেলো। মামলার তদন্ত প্রতিবেদনও দাখিল করেনি তদন্তকারী সংস্থা। এতদিনে প্রতিবেদন দাখিল না হওয়ায় হতাশ আমাদের পরিবার। মামলার তদন্ত সংস্থা র‍্যাবকে এলিট ফোর্স বলা হয়। এলিট ফোর্স দীর্ঘ দিনেও প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। তারা ব্যর্থতা স্বীকার করে সংবাদ সম্মেলন করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, গত সাড়ে ১১ বছরে আমার চোখের সামনে অনেক আলোচিত হত্যা মামলার বিচার শেষ হয়েছে। সেসব মামলার আসামিদের শাস্তি হয়েছে। কিন্তু কোনো অদৃশ্য শক্তির কারণে সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত আটকে আছে? সরকারের কাছে আমাদের পরিবারের দাবি এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য যেন দ্রুত উদ্ঘাটন করে।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‍্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার মো. শফিকুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, মামলাটি গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্ব সহকারে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু গণমাধ্যমকে বলেন, সাগর-রুনি হত্যা মামলাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মামলাটির দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা উচিত। মামলার তদন্ত সংস্থা র‍্যাব যদি তদন্ত করতে না পারে অন্য কোনো সংস্থা দিয়ে তদন্ত করানো যেতে পারে।

ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ আনিসুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার প্রতিবেদন এখনো পাইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
  • © All rights reserved © 2019 alokitoswapner-bd.com - It is illegal to use this website without permission.
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102