শুরু হয়েছে সিলেটের ৭০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর বার্ষিক ওরস। রোববার (১৮ মে) সকাল ১০টায় গিলাফ ছড়ানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে শাহজালাল (রহ.)-এর ৭০৬তম বার্ষিক ওরসের আনুষ্ঠানিকতা।
প্রতি বছর আরবি মাসের ১৯ ও ২০ জিলকদ দুই দিনব্যাপী হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর ওরস অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। প্রতি বছর ওরসে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার ভক্ত-আশেকান জড় হন শাহজালালের মাজারে। মাজারে গিলাফ ছাড়ানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় ওরসের আনুষ্ঠানিকতা।
শুক্রবার রাত থেকেই ভক্তরা আসতে শুরু করেন মাজার প্রাঙ্গণে। দুই দিনব্যাপী ওরস মাহফিলে জিকির-আজকার, খতমে কোরআন, আখেরি মোনাজাত ও শিরনি বিতরণের আয়োজন করা হয়েছে।
অন্যান্য বছরের মতো এবার ভক্ত-আশেকানদের আসর বসেনি মাজার এলাকায়। এবার শান্তিপূর্ণভাবে ওরস সম্পন্ন করতে প্রশাসন ও মাজার কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রশাসন শান্তিপূর্ণ-সুশৃঙ্খলভাবে মাজারের পবিত্রতা রক্ষা করে ওরস সম্পন্ন করার লক্ষ্যে এরই মধ্যে সিলেটের সব দল-মতের মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে।
রোববার সকালে শাহজালালের মাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে ভিড় জমিয়েছেন মাজারের ভক্ত-অনুরাগীরা। সকাল ১০টার দিকে মাজার কর্তৃপক্ষের গিলাফ ছড়ানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় ওরসের আনুষ্ঠানিকতা। দলে দলে ভক্ত-অনুরাগীরা প্রবেশ করছেন মাজারে। চারপাশে ‘লালে লাল, বাবা শাহজালাল’ স্লোগানে মুখর মাজার এলাকা। সকাল থেকে পুলিশের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো।
এদিকে প্রতি বছর ওরসে মাজারের আশপাশের এলাকায় সামিয়ানা টানিয়ে আসর বসান ভক্তরা। তবে রোববার সকাল থেকে কোনো আসর বসাতে দেখা যায়নি। মাজারের পেছনে একটি জায়গায় বসে ভক্তদের মিলাদ পড়তে দেখা গেছে। তাছাড়া সার্বিক নিরাপত্তায় অস্থায়ী পুলিশ বক্স স্থাপন ছাড়াও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপর থাকতে দেখা গেছে।
এর আগে ওরস উপলক্ষে গত শুক্রবার বিকেলে মাজার এলাকা পরিদর্শন করেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার মো. রেজাউল করিম। পরে তিনি মাজার মসজিদ প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন।
শাহজালাল মাজারের খাদেম সামুন মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, ওরসে শিরক বা বিদআতমূলক কোনো কার্যক্রম করা যাবে না। বসানো যাবে না গাঁজার বা নাচ-গানের আসর। এবার ওরসে জিকির আজকার, খতমে কোরআন, আখেরি মোনাজাত ও শিরণী বিতরণের আয়োজন করা হয়েছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মো. সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ওরসে সব রকম অপরাধমূলক কার্যক্রম বন্ধে কঠোর প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেছে পুলিশ। কেউ যাতে মদ-গাঁজার আসর না বসান সে বিষয়টি তদারক কমিটি সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখবে। সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পাশাপাশি মাজার প্রাঙ্গণে সাদা পোশাকে পুলিশ রয়েছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার মো. রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, শিরক ও বিদআতমূলক কার্যক্রম পরিহার করে এ বছর ওরস সম্পন্ন হবে। ভক্তদের নিরাপত্তার স্বার্থে মাজার প্রাঙ্গণে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে।
তিনি বলেন, নামাজ ছাড়া মাজারে যেন কেউ সেজদা না দেন, শিরক-বিদআতমূলক কাজে জড়িত না থাকেন এ লক্ষ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য লিফলেট বিতরণ ও মাজার আঙিনায় পোস্টার স্থাপন করা হয়েছে। নারীরা পর্দার সঙ্গে অবস্থান করবেন।