শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১২:১৩ অপরাহ্ন

যুদ্ধের দামামা, এবার ভারতের পাশে যুক্তরাষ্ট্র

আলোকিত স্বপ্নের বিডি
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলাকে ঘিরে তলানিতে এসে ঠেকেছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক। ঘটনার পর থেকে পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে দুদেশ। তার ওপর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আর হুমকি-ধমকিতে ক্রমেই বাড়ছে উত্তেজনা। এরই মধ্যে কাশ্মীর সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলওসি) টানা ৭ দিন গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে। সীমান্তে যেকোনো ধরনের হুমকি মোকাবিলায় এরই মধ্যে নিজের তিন বাহিনীকে অভিযানের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।  আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সহকারে এলওসিতে যুদ্ধের মহড়া দিচ্ছে পাকিস্তানি সেনারাও। এমন পরিস্থিতিতে ভারতকে পূর্ণ সমর্থনের কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

বৃহস্পতিবার (১ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে এনডিটিভি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এদিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। এ সময় পেহেলগাম হামলার ঘটনায় ভারতের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংকে আশ্বস্ত করেছেন যে ভারতের ‘আত্মরক্ষার’ প্রতি পূর্ণ সমর্থন আছে যুক্তরাষ্ট্রের।

পেহেলগামে হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফোনালাপে বলেন, সন্ত্রাসী সংগঠনকে প্রশিক্ষণ ও অর্থায়ন করার ইতিহাস রয়েছে পাকিস্তানের। দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের পরিচয় প্রকাশ হয়েছে। তারা বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন দিচ্ছে এবং এই অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। বিশ্ব এই সন্ত্রাসবাদ থেকে আর চোখ বন্ধ করে রাখতে পারে না।

এ সময় ভারতের ‘আত্মরক্ষার’ প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইয়ে পাশে আছে যুক্তরাষ্ট্র।

মূলত, পেহেলগাম হামলা ঘিরে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের লাইন অব কন্ট্রোলে (এলওসি) টানা সাতদিন গোলাগুলি হয়েছে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে। এরপরই যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।

এর আগে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে কথা বলেছেন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ওই ফোনালাপেও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন জানানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। তবে, চলমান উত্তেজনা নিরসনে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এদিকে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ভারতের সঙ্গে সীমান্তবর্তী লাইন অব কন্ট্রোলের (এলওসি) কাছে পূর্ণমাত্রার সামরিক মহড়া চালিয়েছে পাকিস্তানের সেনারা। বৃহস্পতিবার ট্যাংক, কামান, গোলা ও তাজা গুলি নিয়ে মহড়া দেয় তারা।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সূত্র জানিয়েছে, শত্রুপক্ষের যে কোনো ধরনের হামলার কঠোর জবাব দেওয়ার জন্য সাজানো হয়েছে এই মহড়া। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সাধারণ সেনারাও অংশ নেন এতে।

একইদিন কাশ্মীর সীমান্তে বিরাজমান উত্তেজনা ঘিরে পাকিস্তানের পক্ষে থাকার ঘোষণা এসেছে চীনের পক্ষ থেকে। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরে নিযুক্ত চীনা কনসাল জেনারেল ঝাও শিরেন বলেছেন, সব পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের পাশে থাকবে বেইজিং।

অবশ্য তিনি ভারতের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পাকিস্তানকে শান্তির পথ খোঁজার আহ্বানও জানিয়েছেন এ সময়।

প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীরে এটিই সবচেয়ে বড় হামলা। পরোক্ষভাবে পাকিস্তান এ হামলায় জড়িত, এমন অভিযোগ তুলে বুধবার দেশটির সঙ্গে ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে ভারত। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় দেশটি। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান। স্থগিত করে দেওয়া হয় ভারতের সঙ্গে সবরকম বাণিজ্যও।

এ ছাড়া সিন্ধু নদের পানি ইস্যুতে কড়া বার্তা দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। স্পষ্ট ভাষায় তিনি ঘোষণা দেন, যেকোনো মূল্যে নিজের পানির অধিকার রক্ষা করবে পাকিস্তান। সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের জেরে ভারতকে হুমকি দেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা ও দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টোও। তিনি বলেন, সিন্ধু দিয়ে হয় পানি বইবে, না হয় ভারতীয়দের রক্ত বইবে।

পাকিস্তান প্রয়োজনে পারমাণবিক হামলার জন্যও প্রস্তুত আছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ ও রেলমন্ত্রী মোহাম্মদ হানিফ আব্বাসি।

অন্যদিকে পেহেলগাম হামলায় জড়িত ও মদতদাতাদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, আমরা প্রতিটি সন্ত্রাসী ও তাদের মদতদাতাদের খুঁজে বের করব এবং এমন শাস্তি দেব, যা তারা কল্পনাও করতে পারবে না। সময় এসেছে সন্ত্রাসের আশ্রয়স্থল সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার। ১৪০ কোটি মানুষের দৃঢ় সংকল্প সন্ত্রাসের মদতদাতাদের চূর্ণ করে দেবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
  • © All rights reserved © 2019 alokitoswapner-bd.com - It is illegal to use this website without permission.
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102