পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, ‘বিগত সময়ে দলীয় প্রভাবে আমরা পুলিশ বাহিনী হেন অন্যায় নাই যা করি নাই। এটা সবাই জানে। এজন্য আমরা অত্যন্ত দুঃখিত, অত্যন্ত লজ্জিত। পুলিশ বিভাগ যাতে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকে এজন্য পুলিশ সংস্কার কমিশনে দাবি জানানো হয়েছে। পুলিশে রাজনৈতিক কুপ্রভাবের পরিবর্তে সুপ্রভাব যেন আসে।’
আজ শনিবার সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে একথা বলেন।
আইজিপি বলেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে কোনও পুলিশ এমন নির্মম আচরণ করেনি। আমাদের মধ্যে সেই রিয়েলাইজেশনটা আসে যখন এসব চিত্র দেখি, যেসব ঘটনা আমরা ঘটিয়েছি, আমার মনে হয় পৃথিবীর ইতিহাসে কোনও পুলিশ এ রকম করেনি। পুলিশ এত নির্মম হতে পারে আমি ব্যক্তিগতভাবে ধারণা করতে পারিনি। আমরা আগে কাউকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে একটা মামলা দিয়ে ভেতরে রেখে দিয়েছি। কিন্তু একেবারে গুলি করে মেরে ফেলা, এটার জন্য আমার কাছে কোনও জবাবই নাই। এই পর্যায়ে আমরা চলে গেছি, এটা থেকে উত্তরণটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।’
তিনি আরও বলেন, ‘কষ্টকর একটা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে একটা ঝড় বয়ে গেছে। শুধু পুলিশ নয়, সমাজের অন্য লোকের মধ্যেও একই অবস্থা। পুলিশের প্রতি ঘৃণা এত বেশি হয়েছে যে, মানুষ আর নিতে পারছিল না। এ জন্য আমি বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছি, সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছি।’
আইজিপি বলেন, ‘সমাজের কিছু অসাধু লোক, নেতা, প্রভাবশালীরা নিরীহ লোকদের মামলার আসামি করছে, এটি উদ্বেগের বিষয়। তবে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া আছে, যাতে কোনও নিরীহ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা না হয়, তাদের হয়রানি করা না হয়।’
৫ আগস্টের পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, ‘কাউকে চাঁদা দেবেন না, ভয়ও পাবেন না। আমরা সকল সময়ই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আছি। ব্যবসায়ীরা যাতে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারে সেই পরিবেশ বজায় রাখতে পুলিশ সর্বদা কাজ করে যাচ্ছে।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে সিলেটের সাংবাদিক এ টি এম তুরাব নিহতের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, ‘তুরাব হত্যা মামলায় পুলিশ কমিশনার গুরুত্ব সহকারে কাজ করে যাবেন। সাংবাদিক তুরাব পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে গুলিতে মারা গেছেন। তাকে তো আর ফিরিয়ে আনা যাবে না। আমাদের ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আর কোনও সুযোগ নেই।
বর্তমানে পুলিশ মনভাঙা অবস্থায় আছে উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, ‘ভয়ে-আতঙ্কে তাদের মন ভেঙে গেছে। গণঅভ্যুত্থানে সিনিয়র পুলিশ সদ্যরা জুনিয়রদের হুকুম দিয়ে তাদের অনিরাপদ রেখে পালিয়ে গেছে। বর্তমানে পুলিশ ফোর্সকে জাগিয়ে তুলা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’
আদালত প্রাঙ্গণে আসামিদের মারধরের বিষয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। বিজ্ঞ আদালতঅ পরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করবেন।’
মতবিনিময় সভায় র্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, পুলিশের সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মো. মুশফেকুর রহমান, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. রেজাউল করিমসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।