বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ করে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবী।
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার জিউধরা ইউনিয়নের লক্ষ্মীখালী গ্রামের শ্রীধাম গোপালচাদ সাধু ঠাকুরের সেবাশ্রমে ১৯৭১ সালে ১৮০ জনকে রাজাকারেরা গুলি ও জবাই করে নির্বিচারে গনহত্যা করে।কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫৪ বছরে এসেও এসকল শহীদের স্মৃতি রক্ষায় নেয়া হয়নি কোন যুগোপযোগী পদক্ষেপ। স্থানীয়দের দাবি, মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস ঐতিহ্য আগামী প্রজন্মকে জানাতে লক্ষ্মীখালীর এই বধ্যভূমি সংরক্ষণ করা অতীব প্রয়োজন।
১৯৭১ সালে লক্ষ্মীখালী গ্রামে রাজাকারের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা গোপাল সাধু ঠাকুরের বংশধর ননী গোপাল সাধু বলেন, ১৯৭১ সালে ‘রাজাকারের প্রতিরোধে দীর্ঘ ২ ঘণ্টা যুদ্ধ করেও বাঁচাতে পারিনি গোটা গ্রামসহ দেড়শতাধিক মানুষের প্রাণ।
একই গ্রামের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া দুলাল শিকদার জানান, বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার সাহেবের মাঠ এলাকায় আগেই অবস্থান নেন বাগেরহাট জেলার রাজাকার বাহিনীর শান্তি কমিটির প্রধান রজ্জবালির নেতৃত্বে ১০০ থেকে ১৫০ জন রাজাকার। ১৯৭১ সালে ২৪ মার্চ ভোরবেলা সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে এই রাজাকাররা লক্ষ্মীখালী গ্রামে প্রবেশ করে চারদিক থেকে আক্রমণ করে। প্রতিরক্ষায় আমরা গ্রামের শতাধিক লোকজন ঢাল, সুরকি ও ৭টি বন্দুক নিয়ে রাজাকারদের প্রতিরোধের চেষ্টা করি। ওরা সংখ্যায় বেশি ও ভারী অস্ত্র থাকায় তাদের সঙ্গে দেড় ঘণ্টা যুদ্ধ করে পিছু হটি। অল্প সময়ের মধ্যে গ্রামজুড়ে ৪০০ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, মারপিট, কুপিয়ে ও পরবর্তীতে গুলি করে হত্যা করে ১৮০ জনকে। তারপর লাশ ঠাকুরবাড়ির সামনে বনজঙ্গলের মাঠের মধ্যে ফেলে রাখে। তিনি আরও জানান, গোপাল ঠাকুরের তৎকালীন গদিঘরে ভক্ত হিরামন ঘোষাই, মনো ঘোষাই, ধোনা ঘোষাইকে কুপিয়ে দ্বিখণ্ডিত করে গুলি করে হত্যা করে। এ সময় রাজাকারেরা লক্ষ্মীখালী গ্রামের মুকুন্দ শিকদার, মনোয়ার শিকদার, নিশিকান্ত মন্ডল, জগনাথ ঢালী, দোনাচার্য মন্ডলকেও হত্যা করে। এ ছাড়া সুরেন্দ ঢালী, অতুল বৈরাগী, দুলাল বৈরাগী, গনেশ শিকাদার, কাকরাতলী গ্রামের ইয়াকুব আলী হিন্দুবাড়িতে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ঠেকাতে গেলে তাদের হত্যা করে রাজাকাররা। এভাবে বিভিন্ন উপজেলা থেকে ঠাকুরবাড়িতে আশ্রয় নেওয়া দেড়শতাধিক মানুষকে সেদিন নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছিলো।
স্থানীয় বাসিন্দা বিশ্বজিৎ হালদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাওলাদার, পরিমল মন্ডল, দুলাল শিকদার, অনিল কৃষ্ণ মন্ডল, বিধান বসু, বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাক শেখসহ অনেকেই ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, প্রতি বছর এ দিনটি এলে অস্থায়ী ভিত্তিতে কালো কাপড় দিয়ে, ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।উপজেলা প্রসাশনের কাছে জোর দাবি এখানে আধুনিকায়ন বধ্যভূমি সংরক্ষণ করে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের যাবতীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হোক ।
সেবাশ্রমের বর্তমান গদিনশিন বাংলাদেশ মতুয়া মহাসংঘের সাধারণ সম্পাদক সাগর সাধু ঠাকুর বলেন, লক্ষ্মীখালীর গণহত্যায় শহিদদের স্মৃতিতে বধ্যভূমি সংরক্ষণের দাবি দীর্ঘদিনের। এজন্য সরকারের দায়িত্বশীল উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরকেও লিখিতভাবে আবেদনও করা হয়েছিল। বধ্যভূমির সংরক্ষণের কাজ হবে শুনে আসছি। কিন্তু আলোর মুখ দেখতে পাচ্ছে না এলাকাবাসী।
উল্লেখ্য যে এই উপজেলার তেলিগাতি, তেঁতুলবাড়ীয়া, এলাকার স্মৃতি স্তম্ভগুলো অযত্ন অবহেলা ও সংস্কারের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে।