জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস । ১৯৭৫ সালের এই দিনে সিপাহি-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবে দেশের তৎকালীন রাজনীতির গতিধারা পাল্টে গিয়েছিল। দেশ ও জাতি পেয়েছিল নতুন দিশা।
ময়মনসিংহের ফুলপুরে ‘৭ নভেম্বর(বৃহস্পতিবার) দুপুরের পর হতে ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস, রাজপথ প্রদক্ষিণ বর্নাঢ্য আনন্দ র্যালিসহ মুক্ত মঞ্চে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় দেখা যায়, ফুলপুর সদর পৌরসভাসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন হতে রাজপথে বর্নাঢ্য আনন্দ র্যালি নিয়ে মিছিলে- মিছিলে, মিছিল নিয়ে পুরাতন শহীদ মিনার মাঠে হাজার হাজার বিএনপির সমর্থীত নেতাকর্মীদের জড়ো হতে দেখা যায়।
পরে সেখান থেকে আগত বিভিন্ন প্রান্তের বিশাল মিছিল শহীদ মিনার হতে যাত্রা শুরু করে হালুয়াঘাট টু ময়মনসিংহ মহা সড়কের আমুয়াকান্দা হয়ে রাজপথ প্রদক্ষিণ করে স্লোগানে স্লোগানে শহীদ মিনার সংলগ্ন স্থানে রাজপথসহ মুক্ত মঞ্চের চারপাশে হাজার হাজার জনতার ঢলের মাঝে এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন,
ময়মনসিংহ -২ আসনের সাবেক এমপি, সাবেক ফুলপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষকদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি ও ময়মনসিংহ উঃজেলা বিএনপি’র ১ নং সদস্য, বীর মুক্তিযুদ্ধা, আলহাজ্ব এড. আবুল বাশার আকন্দ সাহেব।
ময়মনসিংহ উঃজেলা বিএনপি’র সদস্য ও ফুলপুর উপজেলা বিএনপি’র সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমদাদ হোসেন খাঁনের সভাপতিত্বে এবং ফুলপুর উপজেলা যুবদলের সভাপতি সানোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
এসময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন,ময়মনসিংহ উঃজেলা বিএনপি’র সদস্য ও ময়মনসিংহ উঃজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক কুদরত আলী, ময়মনসিংহ উঃজেলা বিএনপি সদস্য ও ফুলপুর উপজেলা বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমজাদ সরকার।
৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসটি’র
আয়োজন করেন ফুলপুর উপজেলা -পৌর বিএনপি এবং সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এখানে উল্লেখ্য যে,১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড এবং ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার ঘটনার ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনীর তৎকালীন উপপ্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফ তার অনুসারী সেনা সদস্যদের নিয়ে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করেন। নিজেকে সেনাপ্রধান হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ৬ নভেম্বর বঙ্গভবনে গিয়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদকে গ্রেপ্তার করে করে মন্ত্রিসভা বাতিল ও জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেন খালেদ। প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে দেশের প্রেসিডেন্টের পদে বসান। ওই রাতেই সেনাবাহিনীর সাধারণ সিপাহিরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
সেই অভ্যুত্থানে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দিয়ে সর্বস্তরের জনতা রাজপথে নেমে আসে। সিপাহি-জনতার মিলিত সেই বিপ্লবে বন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত হন জিয়াউর রহমান। পাল্টা অভ্যুত্থান ঠেকাতে গিয়ে ৭ নভেম্বর সকালে কয়েকজন অনুসারীসহ প্রাণ হারান খালেদ মোশাররফ। অভূতপূর্ব এক সংহতির নজির সৃষ্টি হয় দেশের রাজনীতিতে। জিয়া চলে আসেন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই পটপরিবর্তনের পর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রভাবমুক্ত হয়ে শক্তিশালী সত্তা লাভ করে। গণতন্ত্র অর্গলমুক্ত হয়ে অগ্রগতির পথে এগিয়ে যায়, এই দিন থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়।
এর পর থেকে ৭ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। বিএনপি সরকারের আমলে এ দিনটিতে ছিল সরকারি ছুটি। তবে আওয়ামী লীগের দেড় যুগের শাসনামলে গত দেড় দশকেরও বেশি সময় দিবসটি স্বাচ্ছন্দ্যে উদযাপন করতে পারেনি বিএনপি।
তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে এ বছর দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে দলটি।