বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:২৭ পূর্বাহ্ন

অন্তবর্তীকালীন সরকারে চট্টগ্রাম জেলার ৫ বিশিষ্টজন স্থান পেয়েছে। 

এ এম রিয়াজ কামাল হিরণ- চট্টগ্রাম জেলা। 
  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ৯ আগস্ট, ২০২৪
অন্তবর্তীকালীন সরকারে চট্টগ্রাম জেলার ৫ বিশিষ্টজন স্থান পেয়েছে। 
নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে শপথ নিলেন ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। যেখানে স্থান পেয়েছেন চট্টগ্রাম এর ৫ বিশিষ্টজন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাত ৯:২০ মিনিটে বঙ্গভবনের দরবার হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বঙ্গভবনের দরবার হলে তাকে শপথ বাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর শপথ নিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১৩ উপদেষ্টা।
অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকারে স্থান পাওয়া চট্টগ্রামের ছয় বিশিষ্ট জনেরা হলেন— অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নূর জাহান বেগম, হাটহাজারীর সন্তান ফারুক-ই আজম বীরপ্রতীক, চন্দনাইশের ফরিদা আখতার, সাতকানিয়ার সন্তান ড. আ ফ ম খালেদ হোসেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে এছাড়া রয়েছেন, অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, মানবাধিকারকর্মী আদিলুর রহমান খান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাসান আরিফ, সাবেক পররাষ্ট্রসচিব তৌহিদ হোসেন, পরিবেশ আইনবিদ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক বিধান রঞ্জন রায়, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ।
নিয়োগ পাওয়া ১৬ উপদেষ্টার মধ্যে ১৩ জন আজ শপথ নিয়েছেন।
ঢাকার বাইরে থাকায় তিনজন শপথ নিতে পারেননি। তবে তাদের নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। তারা হলেন: ফারুক–ই–আজম, সুপ্রদীপ চাকমা ও বিধান রঞ্জন রায়। শিগগিরই তারা শপথ নেবেন বলে জানা গেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস চট্টগ্রামের সন্তান। ১৯৪০ সালের ২৮ জুন তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বাথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৪৪ সালে ড. মুহাম্মদ ইউনূস চট্টগ্রাম নগরীর লামাবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করে পরবর্তীতে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং পূর্ব পাকিস্তানের ৩৯ হাজার ছাত্রের মধ্যে ১৬তম স্থান অধিকার করেন। এরপর তিনি চট্টগ্রাম কলেজে পড়াশোনা করেন। পরে তিনি এই কলেজে প্রভাষক হিসেবেও যোগ দেন। পরে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি অধ্যাপক পদে উন্নীত হন এবং ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত এ পদে কর্মরত ছিলেন।
মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৯৬ সালে সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এই পুরস্কার লাভ করেন।
নুরজাহান বেগম : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছেন হাটহাজারীর কুয়াইশ বুডিশ্চরের সন্তান, গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরজাহান বেগম। প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম শুরুর সূচনাকাল থেকে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের সাথে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে তিনি গ্রামীণ ডিস্ট্রিবিউশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
১৯৭৬ সাল থেকে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রথম সারির সহযোগী হিসেবে থাকা নুরজাহান বেগম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। গ্রামীণ ব্যাংকের তৃণমূল গোষ্ঠীতে দরিদ্র গ্রামীণ মহিলাদের সংগঠিত ও প্রশিক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ব্যাংকের শুরুর দিকে এবং সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং দিনে তিনি গ্রামীণ ব্যাংক ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের প্রথম প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পৃথিবীর বহুদেশে মাইক্রো–ক্রেডিট প্রোগ্রামের পরামর্শদাতা, প্রশিক্ষক এবং মূল্যায়নকারী হিসেবেও কাজ করেছেন। তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, সম্মেলন এবং সেমিনারে একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে বক্তৃতা করেছেন। তিনি গ্রামীণ ফাউন্ডেশন, ইউএসএসহ বেশ কয়েকটি সংস্থার বোর্ডে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। উল্লেখ্য, তিনি প্রখ্যাত নাট্যকার সেলিম আল দ্বীন এর বোন।
ফারুক ই আজম বীরপ্রতীক:
মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বীরপ্রতীক উপাধি পাওয়া ফারুক-ই-আজমের বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে। তিনি ১৯৫০ সালে হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র সমন্বিত যুদ্ধাভিযান ‘অপারেশন জ্যাকপটের’ উপ-অধিনায়ক ছিলেন ফারুক-ই-আজম। ১৯৫০ সালে জন্ম নেওয়া ফারুক-ই-আজম পরে চট্টগ্রাম নগরীর মেহেদিবাগ সড়কে তিনি স্থায়ী আবাস গড়ে তোলেন। তিনি ও তার স্ত্রী শামীমা ফারুক চট্টগ্রামের প্রথম ফ্যাশন হাউস ‘রমণীয়া’ গড়ে তোলেন।
ফরিদা আখতার:
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার একজন লেখক, গবেষক ও আন্দোলনকর্মী। তার জন্ম চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ থানার হারলা গ্রামে।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পড়াশোনা করেছেন। নারী উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, কৃষি, মৎস্য সম্পদ, তাঁত শিল্প, গার্মেন্টস শিল্প ও শ্রমিক, জনসংখ্যা এবং উন্নয়নমূলক বিষয়ে নিবিড়ভাবে দীর্ঘ প্রায় তিন দশক ধরে কাজ করছেন তিনি। বর্তমানে তিনি উবিনীগ (উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণা) এর নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন:
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায়। তিনি ১৯৫৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সাতকানিয়া উপজেলার মাদার্শা ইউনিয়নের মক্কার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ একজন ইসলামি পণ্ডিত ছিলেন। ড. খালিদ হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক নায়েবে আমীর, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শিক্ষা উপদেষ্টা, মাসিক আত তাওহীদের সম্পাদক, বালাগুশ শরকের সহকারী সম্পাদক এবং আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের কুরআনিক সায়েন্সেস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অতিথি শিক্ষক। তিনি চট্টগ্রামের ওমরগণি এমইএস কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধানও ছিলেন। বিশ্ব মুসলীম লীগের মুখপাত্র দ্যা ওয়ার্ল্ড মুসলিম লীগ জার্নালসহ বিভিন্ন সাময়িকীতে তার দুই শতাধিক গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত ইসলামী বিশ্বকোষ দ্বিতীয় সংস্করণের ৩ থেকে ৯ খণ্ড ও সীরাত বিশ্বকোষ সম্পাদনা করেছেন।
এএফ হাসান আরিফ:
বাংলাদেশের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এএফ হাসান আরিফ ভারতের কলকাতায় জন্ম ও বিভিন্ন স্তরে শিক্ষা গ্রহণ করলেও তার জীবনের বড় একটি অংশ কেটেছে চট্টগ্রামে। তিনি ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। এএফ হাসান আরিফ বিভিন্ন সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ; চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ; চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেছেন।
আপনার মন্তব্য লিখুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
  • © All rights reserved © 2019 alokitoswapner-bd.com - It is illegal to use this website without permission.
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102