উচ্চ আদালতের দ্বারস্ত হয়েছে রোবাইয়াত ফাতিমা তনি।
আলোচিত নারী উদ্যোক্তা রোবাইয়াত ফাতিমা তনির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘সানবিস বাই তনি’কে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ আব্দুল জব্বার মন্ডল কর্তৃক বে.আইনিভাবে হ.য়রানি করার অ.ভিযোগ উঠেছে। দুই দফা জরিমানার পরও শোরুম বন্ধ, তদন্ত কমিটি গঠন ও পরবর্তীতে হয়রানি অব্যাহত রাখায় উচ্চ আদালতের দ্বারস্ত হয়েছে তনি। মঙ্গলবার (২১ মে) ভোক্তা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিশ দেয়ার পর রিট পিটিশন দায়ের করেছেন তিনি।
জানা গেছে, গত ৪ এপ্রিলের এক অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজধানীর পুলিশ প্লাজায় সানবিস বাই তনির প্রধান শোরুমে গত ১২ মে অভিযান চালায় অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জব্বার মন্ডল ও ইন্দ্রানী রায়। ওই দিন তার শোরুম সিলগালা করে দেয়া হয় এবং অভিযোগের শুনানির জন্য পরের দিন তনিকে অধিদপ্তরের হাজির হতে বলা হয়। ১৩ মে তনি অধিদপ্তরে গেলে তাকে দুই দফায় ৫০ হাজার ও দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
নিয়ম অনুযায়ী শাস্তি পাওয়ার পর তার শোরুম খুলে দেওয়ার কথা থাকলেও তা করেনি ভোক্তা অধিদপ্তর। এসময় সানবিসের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সংস্থাটি। তনির অভিযোগ, তাকে যে জরিমানা করা হয়েছে তা বেআইনি। কিন্তু অন্যান্য শোরুমগুলোতেও অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তার থেকে জরিমানার টাকা আদায় করা হয়। জরিমানার টাকা দিলে বন্ধ শোরুম খুলে দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন জব্বার মন্ডল। কিন্তু খুলে না দেওয়ায় জরিমানাসহ শোরুম বন্ধের প্রতিকার চেয়ে উচ্চ আদালতে গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তনি।
সানবিসকে দুই দফা জরিমানার টাকা আদায়ের দুটি রশিদ সেখানে দেখা যাচ্ছে, একজন অভিযোগকারী লুবানা ইয়াসমিন ও অন্যজনের নাম রাজু। এর মধ্যে লুবানা ইয়াসমিন অভিযোগ করেছে গত ৩ মে। কিন্তু তিনি পণ্য কিনেছেন ৯ ফেব্রুয়ারি। ভোক্তা অধিকার আইনের ৬০ ধারা অনুযায়ী ঘটনার ৩০ দিনের মধ্যে অভিযোগ করতে হয়। কিন্তু লুবানা অভিযোগ করেছেন ৫৪ দিন পর। ফলে এই অভিযোগটি আমলযোগ্য নয় বলে মনে করেন তনির আইনজীবী সৈয়দ খালেকুজ্জামান অরুন।
অন্যদিকে, রাজু নামের যে অভিযোগকারীকে দেখিয়ে জরিমানা করা হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ ভুয়া বলে দাবি করেছেন তনি। লুবানার অভিযোগের শুনানি হয় ঢাকা বিভাগীয় উপপরিচালক ইন্দ্রানী রায়ের অধীনে। অন্যদিকে জব্বার মন্ডল ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক। ইন্দ্রানীর কাছে শুনানি থাকলেও একই সময় জব্বার মন্ডল সেখানে গিয়ে ভুয়া অভিযোগে দুই লাখ জরিমানা করেন। জরিমানার টাকা না দিলে অন্যান্য শোরুম বন্ধ করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করেন। রাজু নামের কারো অভিযোগের জন্য তনিকে কোনো নোটিশ বা শুনানি করা হয়নি বলেও জনিয়েছেন তনি।
এদিকে দুই দফা জরিমানার পরও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে না দেয়ায় তনি বাধ্য হয়ে উচ্চ আদালতে গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তনি বলেন, জব্বার মন্ডল আমাকে বলেছিলেন, আপনাকে যে জরিমানা করা হচ্ছে এটা পরিশোধ করেন। তাহলে এটা এখানেই শেষ হয়ে যাবে। আর শোরুম খুলে দেওয়া হবে। আমি ব্যবসা বাঁচাতে তার কথা মতো টাকা দেই। কয়েকটি কাগজেও আমার সাক্ষর নেওয়া হয়। কিন্তু পরে শোরুম খুলে না দিয়ে তদন্ত কমিটি করেছে। এখন আমাকে বলছে তদন্ত শেষ না হলে খোলা যাবে না। তদন্ত যদি হবে তাহলে তার আগে আমাকে শাস্তি দেয়া হলো কেন? আর রাজু নামের কেউ অভিযোগ করেনি। এছাড়া লুবানার অভিযোগ ৫৪ দিন পর। কেউ কাপড় কিনে ৫৪ দিন পর কাপড় খারাপ বললে সেটা কী করে গ্রহণযোগ্য হয়?
তবে দুই দফা জরিমানা করলেও জরিমানা কী অপরাধে করা হয়েছে সেই আদেশের কপি তনিকে দেয়া হয়নি। এছাড়া তার শোরুম সিলগালা করার বিষয়েও কোনো নোটিশ বা আদেশের কাগজ তাকে দেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে তনির আইনজীবী সৈয়দ খালেকুজ্জামান অরুন বলেন, ‘তনির সঙ্গে যেটা হয়েছে সেটা আইনের ব্যত্যয় হয়েছে। এজন্য আমরা আদালতে গিয়েছি। ভোক্তা অধিদপ্তর তদন্ত কমিটি করেছে। তাহলে তদন্তের আগে তাকে শাস্তি দেয়া হলো কীভাবে? এখন আমরা উচ্চ আদালতের কাছে বিচার প্রার্থনা করেছি। একজন নারী উদ্যোক্তাকে এমন হয়রানি করার প্রতিকার আমরা উচ্চ আদালতে পাবো বলে আশা করি।’
এদিকে মঙ্গলবার আইনি নোটিশ পেয়েই তনির বিভিন্ন শোরুমে অভিযানে নামের সহকারি পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল। প্রথম বনানিতে তনির অফিসে পুলিশ নিয়ে যান তিনি। কিন্তু অফিস বন্ধ থাকায় অভিযান চালাতে পারেননি। পরে বিকালে ধানমন্ডির শোরুমে যান জব্বার মন্ডলের টিম। কিন্তু সেটিও বন্ধ ছিল। পরে বুধবার সকাল থেকে তনির ধানমন্ডির শোরুমের সামনে সকাল থেকেই পুলিশ মোতায়েন করে রাখেন জব্বার মন্ডল।
এসব বিষয় নিয়ে রোবাইয়াত ফাতিমা তনি বলেন, ‘আমি একজন নারী ও তরুণ উদ্যোক্তা। আমার কোনো ভুল থাকলে সেটা সংশোধন করে নিতে কোনো সমস্যা নেই। আমি পুলিশ প্লাজার একটি শোরুম থেকেই মাসে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা করে সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স দেই। কিন্তু ওনারা একটা বেআইনি অভিযোগ দেখিয়ে আমাকে জরিমানা করেছে। আরেকটা সম্পূর্ণ ভুয়া অভিযোগ। এরপরও আমার শোরুম খুলতে দেয়নি। এখন আমি কী করবো? বাধ্য হয়ে আদালতে গিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানতে পেরেছি, আমার এক ব্যবসায়ীক প্রতিদ্বন্দ্বী জব্বার মন্ডলের বন্ধু। তাকে সুবিধা করে দিতেই সানবিসকে টার্গেট করেছে। আমি এটা তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করছি। রেডি হলে আইনি ব্যবস্থা নেব।’
এসব বিষয় নিয়ে সহকারী পরিচালক মোঃ আব্দুল জব্বার মন্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। এজন্য এখন কিছু বলা যাবে না। তদন্ত শেষ হলে জানানো হবে। এটা বলেই ফোন কেটে দেন আব্দুল জব্বার মন্ডল।