নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে এক আতঙ্কের নাম ‘টেনশন গ্রুপ’। নাম শুনলেই আঁতকে ওঠেন এলাকাবাসী। তাদের ভয়ংকর কার্যক্রমে সব সময় ‘টেনশনে’ থাকতে হয় সাধারণ মানুষকে। তাই এই গ্রুপের নাম দেওয়া হয়েছে ‘টেনশন গ্রুপ’। কিশোর গ্যাংয়ের সমন্বয়ে গ্রুপটি পরিচালিত হচ্ছে।
জানা যায়, রাইসুল ইসলাম সীমান্ত নামে এক যুবকের নেতৃত্বে পাড়া-মহল্লা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গ্রুপের সদস্যরা। এই সন্ত্রাসীদলে কমপক্ষে ২০-২৫ জন সদস্য রয়েছে। গ্রুপটির বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
র্যাব ও পুলিশ তাদের বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য একাধিকবার গ্রেপ্তারও করেছে। আসামিরা জেল থেকে বেরিয়ে পুনরায় তাদের কার্যক্রম চালায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, টেনশন গ্রুপের নেতারা ক্ষমতাসীন দলের পরিচয়দাতা। তাদের পদ-পদবি না থাকলেও যেকোনো অপরাধে ব্যবহার করে আসছে দলের নাম।
সম্প্রতি সিদ্ধিরগঞ্জের কয়েকটি এলাকায় ঘটেছে কিশোর গ্যাংয়ের ভয়ানক হামলার ঘটনা। গেল বছরের ৩১ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনের বসতবাড়িতে মধ্যরাতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে তারা।
কাউন্সিলরের অভিযোগ, এলাকার পরিচিত গ্যাং টেনশন গ্রুপের নেতা সীমান্ত ও তার বাহিনীর সদস্যরা তার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে। পরবর্তী সময়ে ৫ সেপ্টেম্বর ফের তার বাড়িতে ওই টেনশন গ্রুপ হামলা চালায়। পরদিন ৬ সেপ্টেম্বর একলাছুর রহমান নামের এক ব্যবসায়ীর বতসবাড়িতে হামলা চালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তারা।
ভুক্তভোগী একলাছুর রহমানের দাবি, তার কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে। দাবীকৃত চাঁদা না দেওয়ায় তার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এর দুই দিন পরই ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে প্রবেশ করে সচিবকে বেধড়ক মারধর ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়। এরপর ১০ সেপ্টেম্বর রাতে ওই এলাকার মোক্তার হোসেন নামে এক ব্যক্তির স’ মিলে হামলা চালায় তারা। ২৮ সেপ্টেম্বর একই এলাকার আলমগীর হোসেন নামের এক ব্যবসায়ীর একটি কয়েল কারখানায় ভাঙচুর করে। মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করা হয়েছিল সোনালী কয়েল কারখানার মালিক হারুন মিয়ার কাছে। এ হামলায় কারখানার ম্যানেজারসহ কমপক্ষে পাঁচজনকে পিটিয়ে আহত করা হয়। ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয়ে হারুন মিয়া থানায় মামলা করতে সাহস পাননি।
এলাকাবাসী জানান, টেনশন গ্রুপ নামে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ আত্মপ্রকাশ করার পর ২০২১ সালের ২৩ এপ্রিল মিজমিজি দক্ষিণ পাড়া এলাকায় মাদক কারবারে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র এলাকাবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় তিনজন আহত হন। তা ছাড়া ইভ টিজিং থেকে শুরু করে মাদক বিক্রি, মাদক সেবন, চুরি, ছিনতাই, অপহরণের সঙ্গেও এ গ্রুপের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
নূরউদ্দিন মিয়া নামের নারায়ণগঞ্জের এক সমাজকর্মীর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, বর্তমান সময়ে অল্পতেই গ্যাং তৈরি হয়। সিদ্ধিরগঞ্জ শিল্প-বাণিজ্যিক থানা হওয়ায় ওইখানে অস্থায়ী মানুষরা এসে বাড়ি-ঘর তৈরি করে বসবাস করে আসছে। তবে তারা কিছুসংখ্যক লোকের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে থাকে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক জানান, টেনশন গ্রুপের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এই গ্রুপের সদস্যদের ওপর নজর রেখেছে থানা পুলিশ। এলাকায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।