শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৬ অপরাহ্ন

ছেলের জন্য বানানো শুরু, এখন দেশ বিদেশে যাচ্ছে সুলতানার মাছ-মাংসের আচার

আলোকিত স্বপ্নের বিডি
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৫

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার নারী উদ্যোক্তা সুলতানা নাজমিন মিতা এখন পরিচিত ‘রেডি টু ইট’ মাছ ও মাংসের আচার প্রস্তুতকারক হিসেবে। ছেলের হোস্টেলের খাবারের মান ভালো না লাগায় তার কষ্ট কমানোর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হলেও, এখন তার তৈরি আচার দেশের বিভিন্ন জেলা ছাড়িয়ে বিদেশেও যাচ্ছে।

সুলতানা জানান, মাদ্রাসায় পড়া ছেলের জন্য প্রথমে মাংসের আচার তৈরি করেন তিনি। পরে ইলিশ ও চিংড়ি মাছের প্রতি ছেলের আগ্রহ দেখে মাছের আচার তৈরিতেও হাত দেন। তার শুরু হয় যাত্রা।‘ঘরের স্বাদে, দীর্ঘদিন ভালো থাকে—এমন কিছুই বানাতে চেয়েছিলেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমার ছেলে খুব পছন্দ করেছে। এরপর ভাবলাম, যখন মাংসের আচার হয়, তখন মাছের আচার কেন নয়?’—বললেন সুলতানা।ছেলের প্রয়োজন মেটাতে শুরু হলেও ক্রমে দেশ–বিদেশের বহু মানুষের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নেয় তার আচার। বর্তমানে গরু, মুরগি, ইলিশ, চিংড়ি, চ্যাপা শুটকি ছাড়াও রসুন, কালোজিরা, বোম্বাই মরিচ, চুইঝাল, তেঁতুল, আম, জলপাইসহ মৌসুমি ফলের নানা আচার তৈরি করেন তিনি। পাশাপাশি ঝালমুড়ির মশলা, নারকেল নাড়ু, মধু ও ঘি নিয়েও কাজ করছেন।তিনি জানান, ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফরিদপুর, যশোর, পটুয়াখালি, সিলেট, কুমিল্লা, মাগুরা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশালসহ দেশের প্রায় সব জেলাতেই তার পণ্য পাঠানো হয়েছে। বিদেশে সৌদি আরব, দুবাই, কাতার ও ওমানেও পণ্য রপ্তানির সুযোগ পেয়েছেন।

 

রান্নাঘরেই সীমাবদ্ধ জীবনে ভিন্ন পরিচয়ের স্বপ্ন দেখতেন সুলতানা। ২০২৪ সালে মাত্র ১৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। পরে ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স করে ‘তাওহিদ ফুড মার্ট’ নামে ফেসবুক পেজ খোলেন। বন্ধু–আত্মীয়দের মাঝে পণ্য বিক্রি শুরু করেই পান ভালো সাড়া। এরপর পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ও পদক্ষেপ বাস্তবায়িত আরএমটিপি প্রকল্প থেকে ৫০ হাজার টাকার অনুদান এবং সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ লাভ করেন।সুলতানা বলেন, ‘মানুষ এখন সময় কাটায় অনলাইনে। তাই আমার পণ্য, আমার গল্প—সবই মোবাইল স্ক্রিনে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া শুধু বিক্রির জায়গা নয়, ক্রেতাদের সঙ্গে সংযোগের সেতু।’গোপালগঞ্জ সদরের আচার ক্রেতা রবিউল ইসলাম জানান, অনলাইনে ইলিশ মাছের আচার দেখে আগ্রহ জন্মে। পরে মিতার বাসা থেকে ইলিশ, গরুর মাংস ও বোম্বাই মরিচের আচার কিনে আনেন তিনি এবং এখন প্রতি মাসেই তার পরিবার এ আচার কেনেন।

 

বর্তমানে প্রতি মাসে গড়ে ৪০–৫০ হাজার টাকার আচার বিক্রি করেন সুলতানা। দুই কর্মী পণ্য প্যাকেজিং ও ডেলিভারিতে কাজ করেন। খরচ–প্রচার বাদ দিয়ে মাসে প্রায় ১৫ হাজার টাকা লাভ থাকে। স্বামী ও সন্তানও তাকে সহযোগিতা করেন।নারী উদ্যোক্তা হিসেবে তার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আত্মবিশ্বাস, ধৈর্য আর সততা থাকলে নারীরা যেকোনো কিছু করতে পারে। তাওহিদ ফুড মার্টকে বড় ব্র্যান্ডে পরিণত করতে চাই। ভবিষ্যতে বড় পরিসরে এক্সপোর্টও করতে চাই।’এ ছাড়া তিনি জানান, পদক্ষেপের আরএমটিপি প্রকল্পের সহায়তায় বিএসটিআই ও এফআইকিউসি সনদের জন্য আবেদন সম্পন্ন করেছেন। অতি শীঘ্রই সনদ প্রাপ্তির আশা প্রকাশ করেছেন সুলতানা।

 

 

আপনার মন্তব্য লিখুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
  • © All rights reserved © 2019 alokitoswapner-bd.com - It is illegal to use this website without permission.
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102