শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৫ পূর্বাহ্ন

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলরোডের বেহাল দশা, দুর্ভোগ চরমে

ফাহাদ হোসেন,খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) ব্যস্ততম রাস্তা হলরোড। বর্তমানে এই রাস্তার দুরবস্থা চরমে পৌঁছেছে। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাব, ভারী যানবাহনের চলাচল এবং অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে রাস্তাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে কাদা-পানি ও গর্তের সমাহার। ফলে শিক্ষার্থী, কর্মচারী ও স্থানীয় পথচারীদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে উঠেছে। যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, হাঁটাচলাতেও চরম ঝুঁকি ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সবাইকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গল্লামারী মোড় থেকে বিসমিল্লাহ সড়ক পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। ভাঙাচোরা এ রাস্তায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে সৃষ্টি হয়েছে কর্দমাক্ত অবস্থা। তার উপর রাস্তাটি অনেক সরু হওয়ায় শিক্ষার্থীদের চলাচলে ভোগান্তি বেড়েই চলছে। এদিকে গল্লামারী ব্রিজ নির্মাণাধীন থাকায় সবসময় যানজট লেগেই থাকে। তাতে দুর্দশা আরও বাড়ছে। শিক্ষার্থীরা হলরোড দিয়ে চলাচলকালে প্রায়ই কাদা-পানিতে ভিজে যাচ্ছে জামাকাপড়। তাদের জন্য পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে অসহনীয়।
এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন খান জাহান আলী, খান বাহাদুর আহসানউল্লা এবং বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করেন। পাশাপাশি বিসমিল্লাহ ও শাহ শিরীন এলাকার ছাত্রাবাসে থাকা শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রাও ব্যবহার করেন এ রাস্তা। শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ সকাল, দুপুর ও রাতের খাবারের জন্য নির্ভর করে হলরোডের দোকানগুলোর ওপর। আবার রাতে শিক্ষার্থীদের আড্ডার প্রাণকেন্দ্রও এই হলরোড। কিন্তু রাস্তাটির বেহাল দশায় সবকিছুই ভোগান্তিতে পরিণত হয়েছে।
এ বছর খুলনা অঞ্চলে তুলনামূলকভাবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি হওয়ায় রাস্তাগুলোর অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে কোনোভাবে চলাচল সম্ভব হলেও বর্ষায় রাস্তায় কাদা জমে পরিস্থিতি হয়ে উঠছে ভয়াবহ।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে রাস্তাগুলো এই দুর্দশায় পড়েছে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সাকিব হোসেন বলেন, “প্রতিদিন হল থেকে বের হলেই দুর্ভোগে পড়তে হয়। হেঁটে গেলেও ভোগান্তি, রিকশায় গেলেও ভোগান্তি। সামান্য বৃষ্টিতে এই রাস্তায় হেঁটে যাওয়ার মতো পরিবেশ থাকে না। রিকশাচালককেও যেতে রাজি করানো যায় না। শিক্ষকদের আবাসিক এলাকার রাস্তা হলে রাতারাতি ঠিক হয়ে যেত। কিন্তু আমাদের ভোগান্তির দিকে প্রশাসনের নজর নেই।”
খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এহসানুল হক অয়ন বলেন, “হল থেকে বের হয়ে কোনো খাবার কিনতে গেলেই কাদা মাড়াতে হয়। গ্রামের তুমুল বৃষ্টির সময় যেমন প্যান্ট কাদা থেকে বাঁচাতে টেনে হাঁটতে হতো, এখানে ক্যাম্পাসের ভেতরেও নিয়মিত সে অভিজ্ঞতা হচ্ছে।”
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. এস এম মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা জানি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলরোডের অবস্থা খারাপ। তবে এটি আমাদের হাতে নেই। এলজিইডি বটিয়াঘাটা উপজেলার কর্তৃপক্ষকে বলা যেতে পারে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনও তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বটিয়াঘাটা এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী উত্তম কুমার মণ্ডল বলেন, “গল্লামারী মোড় থেকে ময়ূরী নদীর ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তার কাজ আমাদের এলজিইডির করার কথা ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও খুলনা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেডিএ)-এর সঙ্গে মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয় যে, এ রাস্তার ৬০ ফিট কাজ করবে কেডিএ। কিন্তু কেডিএ কাজ করতে পারেনি মূলত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে। কেডিএ বলেছে, রাস্তার প্রস্থ অনুযায়ী কাজ করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর ভেতরে নিতে হবে। কিন্তু প্রশাসন থেকে জানানো হয় রাস্তাটি লিনিয়ার পার্কের দিকে সরিয়ে নিতে। উভয়ের মতবিরোধের জন্য রাস্তাটি সংস্কার সম্ভব হয়নি।”
আপনার মন্তব্য লিখুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
  • © All rights reserved © 2019 alokitoswapner-bd.com - It is illegal to use this website without permission.
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102