চট্টগ্রাম কাস্টমের নিজেরই ভ্যাট বকেয়া ২ কোটি টাকা।
প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব ও ভ্যাট আদায় করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। দেশে শুল্ক আদায়ে সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান এটি। অথচ প্রতিষ্ঠানটিরই গত ১৫ বছরের ভ্যাট বকেয়া পড়েছে ২ কোটি টাকার বেশি। ভ্যাট আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট না দেওয়ার বিষয়কে অনভিপ্রেত বলছেন সংশ্লিষ্টরা। শুধু ভ্যাট নয়, ভাড়াও বকেয়া পড়েছে ১৬ কোটি ৬৫ লাখ ১৪ হাজার ৭৬৫ টাকা, যা পরিশোধ করা হয়নি দীর্ঘদিন ধরে।
বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনারের কাছে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বকেয়া ভ্যাটের টাকা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জমা করে চালানের মূল কপি জমা দিতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র বলেছে, ১৯৬০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের ৮ দশমিক ৩৩ একর জায়গায় গড়ে ওঠে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। বন্দর কর্তৃপক্ষের আইন অনুযায়ী, প্রতিবছর এই জায়গার ভাড়া পরিশোধ করার কথা কাস্টমসের। কিন্তু দীর্ঘ ৬৩ বছরে এক টাকাও ভাড়া পরিশোধ করেনি চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এতে ১৯৬১ সাল থেকে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত কাস্টমসের কাছে বন্দরের ভাড়া বাবদ বকেয়া পড়ে আছে ১২ কোটি ১৯ লাখ ৯০ হাজার ৫১৫ টাকা। ২০০৮ সালের জুলাই থেকে কাস্টম হাউস ভবনের ভাড়ার ওপর ভ্যাট বাবদ বকেয়া পড়েছে ১ কোটি ৪১ লাখ ১৫ হাজার ৪২১ টাকা। মধ্যম হালিশহর মৌজায় কাস্টমসের অকসন শেডের ৫ একর জমি ভাড়ার ওপর ২০১৬ সাল থেকে ভ্যাট বকেয়া ৬৮ লাখ ২৮ হাজার ৬৩৭ টাকা। কাস্টম হাউস ভবন ও অকসন শেডের ভাড়ার ওপর মোট ভ্যাট বকেয়া ২ কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৫৮ টাকা। অকসন শেডের ভাড়া বাবদ কাস্টমসের কাছে ২০১৬ সাল থেকে বকেয়া ৪ কোটি ৪৫ লাখ ২৪ হাজার ২৫০ টাকা। দুটি ভবনের ভাড়া বাবদ কাস্টমসের কাছে চট্টগ্রাম বন্দরের পাওনা ১৬ কোটি ৬৫ লাখ ১৪ হাজার ৭৬৫ টাকা।
কাস্টমস সূত্র বলেছে, সম্প্রতি কাস্টম হাউসের পুরোনো ও জরাজীর্ণ ভবন ভেঙে নতুন ভবন ও স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ১ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ভবন, সাগরিকায় ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমি ও বেনাপোল কাস্টম হাউসসহ আরও উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দ ৭১৫ কোটি টাকা।
তবে বন্দরের ভাড়া পরিশোধ না করায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ভবন নির্মাণে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। বন্দরের অনাপত্তিপত্র ছাড়া চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) থেকে ভবন নির্মাণের প্ল্যান অনুমোদন নিতে পারছে না কাস্টমস। এদিকে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বকেয়া ভাড়া পরিশোধ করা ছাড়া তারা কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে অনাপত্তিপত্র দেবে না।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বন্দর ওই জমির জন্য বাণিজ্যিক হারে পৌর কর পরিশোধ করে থাকে। আইন অনুযায়ী বন্দরের ব্যবহৃত জমির ভাড়া পরিশোধ করা ছাড়া নতুন কোনো স্থাপনা নির্মাণে অনাপত্তি দেওয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি একাধিকবার চিঠি দিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার ব্যারিস্টার বদরুদ্দিন মুন্সি বলেন, ‘বন্দরের ভাড়া ও ভ্যাট বাবদ কিছু টাকা বকেয়া রয়েছে। এ খাতে খরচের মতো প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নেই। বরাদ্দ পাওয়ার জন্য আমরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে জানিয়েছি।’
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দুটি প্রতিষ্ঠানই সরকারি। আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে আসলে বিব্রতবোধ করছি।’